

আদালতের আদেশ অমান্য করে বরগুনা জেলার আমতলী উপজেলায় আমড়াগাছিয়া হোসাইনপুর খানকায়ে ছালেহিয়া কমপ্লেক্সের জমি দখল করে ঘর নির্মাণ!
মাহবুব বিশ্বাস বরগুনা প্রতিনিধি।
আদালতের আদেশ অমান্য করে ছারছীনা পীর প্রায়াত আলহাজ্ব মাওলানা শাহ মোহাম্মদ মোহেবুল্লাহর প্রতিষ্ঠিত বরগুনা জেলায় আমতলী উপজেলার আমড়াগাছিয়া হোসাইনপুর খানকায়ে ছালেহিয়া কমপ্লেক্সের মুল ফটকের সামনে মাজেদা বেগম নামের এক নারী জোরপুর্বক ঘর নির্মাণ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত দুইদিন ধরে ওই ঘরে ওই নারী ও তার মেয়ে বসবাস করছেন। খানকায়ে কমপ্লেক্সের পরিচালক মোঃ নেছার উদ্দিন এমন অভিযোগ করেছেন। এতে খানকায়ে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে বলে আরো অভিযোগ করেন ওই পরিচালক। দ্রæত খানকা থেকে ওই ঘর অপসারণ করে নেয়ার দাবী জানিয়েছেন তিনি।
জানাগেছে, ২০০০ সালে আমতলী উপজেলা আমড়াগাছিয়া নামক স্থানে ছারছীনা দরবারের পীর মাওলানা শাহ মোঃ মোহেবুল্লাহ খানকায়ে ছালেহিয়া কমপ্লেক্স নির্মাণ করেছেন। ওই কমপ্লেক্সে প্রতিবছর ফাল্গুন মাসের প্রথম সপ্তাহে তিনদিন ব্যাপী বাৎসরিক মাহফিল হয়। কমপ্লেক্স দ্বীনিয়া ও হাফিজি মাদ্রাসা রয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানে অন্তত পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী হোস্টেলে থেকে লেখাপড়া করছেন। ওই কমপ্লেক্সের নামে ৩০ একর জমি রয়েছে। ওই জমির মধ্যে ৬৬ শতাংশ জমি মাজেদা বেগম নামের এক নারী দাবী করেন । তিনি ওই জমি দখল পেতে ২০১৫ সালে বরগুনার আমতলী সহকারী জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালতের বিচারক ২০২১ সালে ৮ সেপ্টেম্বর ওই জমি মাজেদার পক্ষে ছোলে ডিক্রী রায় দেন। ওই ডিক্রীর বিরুদ্ধে খানকায়ে ছালেহিয়া কমপ্লেক্সের পরিচালক নেছার উদ্দিন একই আদালতে এ বছর গত ১৪ জানুয়ারী বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। আদালতের বিচারক ওই ছোলে ডিক্রীর রায় স্থাগিত করেন দেন। আদেশে উল্লেখ আছে যতদিন পর্যন্ত বিবাদীগত হাজির না হয়ে সন্তেুাষজনক জবাব না দিবেন ততদিন পর্যন্ত ওই স্থাগিতাদেশ বহাল থাকবে। কমপ্লেক্সের ভাবমুর্তি নষ্টের জন্য একটি প্রভাবশালী মহলের ইন্ধনে মাজেদা বেগম আদালতের আদেশ অমান্য করে গত শনিবার রাতের আধারে মুল ফটকের সামনে টিন সেড ঘর নির্মাণ করেন। ওই ঘরে তিনি ও তার মেয়ে বসবাস করছেন। এতে ওই খানকায়ে কমপ্লেক্সের শ্লালীনতা বিঘœ হচ্ছে। পাঁচ শতাধিক দ্বীনিয়া শিক্ষায় পড়–য়া শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের শ্লালীনতায় ব্যঘাত হচ্ছে এবং কমপ্লেক্সের ধর্মীয় পরিবেশ রক্ষা পাচ্ছে না। এছাড়া প্রতিদিন ওই কমপ্লেক্সের মসজিদে অন্তত ৭-৮ শতাধিক মুসুল্লী জামায়াতে নামাজ আদায় করেন। মুসুল্লীদের অভিযোগ মসদিজে যাওয়ার পথে কমপ্লেক্সের মধ্যে নারীরা ঘোড়াফেরা করেন, যা একেবারেই অশ্লালীন। দ্রæত ওই ঘর অপসারণ করে খানকায়ে কমপ্লেক্সের পরিবেশ রক্ষার দাবী জানিয়েছেন শিক্ষার্থী, শিক্ষক, মুসুল্লী ও পরিচালকরা।
জমিয়াতে হিজবুল্লাহর আমতলী উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সাবেক কাউন্সিলর মোঃ মেনহাজ উদ্দিন বলেন, ছারছীনা পীরের খানকায়ে নারীরা বে-পর্দায় চলাফেরা করবে এটা বে-মানান। দ্রæত ওই নারীদেরকে খানকায় থেকে অপসারণেরর দাবী জানান তিনি।
সোমবার সরেজমিনে ঘুরে দেখাগেছে, কমপ্লেক্সেও মুল ফটকে একটি টিন সেডের ঘর নির্মাণ করা হয়েছে । ওই ঘরের পাশে দুইজন নারী বে-পর্দায় চলাফেরা করছেন।
মুসুল্লী রফিক ও ছত্তার বলেন, মজসিদে নামাজ আদায় করতে গেলে নারীদের প্রদর্শণ করে যেতে হয়। এটা অত্যান্ত দৃষ্টিকটু। জমি নিয়ে ঝামেলা থাকলে আলোচনা করে মিটিয়ে নেয়া যেত কিন্তু এভাবে ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্য নারীদের অবাদ বিচরণ তা খুবই বে-মানান।
মাদ্রাসার শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ ও ফয়সাল বলেন, কমপ্লেক্সের মুল ফটকে এক নারী ঘর নির্মাণ করেছেন। মাদ্রাসায় যেতে হলে ওই নারীদের ভেদ করে যেতে হয়। যা ইসলামী পরিবেশে মানায় না। দ্রত ঘর অপসারণের দাবী জানান তারা।
মাজেদা বেগম বলেন, ওই জমি আমার। আদালত আমার পক্ষে ছোলে ডিক্রী দিয়েছেন। কিন্তু কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ আমার জমি জোরপুর্বক দখল করে রেখেছেন। তাই আমি আমার জমিতে ঘর তুলে বসবাস করছি। ওই ডিক্রী আদালত স্থাগিতাদেশ দিয়েছেন তাহলে কিভাবে আপনী ঘর নির্মাণ করেছেন ? এমন প্রশ্নের জবাব তিনি না দিয়ে নিরব থাকেন।
খানকায়ে ছালেহিয়া কমপ্লেক্সের পরিচালক মোঃ নেছার উদ্দিন বলেন, ওই জমিতে আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আদালতের আদেশ অমান্য করে মাজেদা জোরপুর্বক কমপ্লেক্সের মুল ফটকে ঘর নির্মাণ করে বসবাস করছেন। তিনি আরো বলেন, ওই নারী বে-পর্দায় চলাফেরা করে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক ও মুসুল্লীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করছেন। যা কমপ্লেক্সের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। দ্রæত ঘর অপসারণ করে খানকায়ের পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবী জানান তিনি।
আমতলী থানার ওসি মোঃ আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে আইন শৃঙ্খলা বিঘœ না ঘটে সে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, আদালতের আদেশ অমান্য করে যদি ঘর তুুলে থাকে, তাহলে পুলিশ আদালতের নির্দেশ মতে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হবে।
মোঃমাহবুব বিশ্বাস
বরগুনা
০১৭২৯৪৭৭৯২০