উগ্রবাদীদের হাতে জিম্মি শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবি জানান সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদ।
মোঃ জসিম উদ্দিন বিশেষ প্রতিনিধি:
পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি জেলার গিরিফুল এলাকা থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ৫ শিক্ষার্থীকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদ। বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি জানিয়েছেন সংগঠনটির সমন্বয়ক প্রভাষক মো.শাহজাহান শাজু।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আজ (বুধবার) সকাল আনুমানিক সাড়ে ৬টায় খাগড়াছড়ি গিরিফুল এলাকা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ শিক্ষার্থীকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি বিরোধী সংগঠন ইউপিডিএফের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। অপহৃত শিক্ষার্থীরা হলেন- চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী অলড্রিন ত্রিপুরা, একই বিভাগের শিক্ষার্থী মৈত্রীময় চাকমা, নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী দিব্যি চাকমা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী রিশন চাকমা এবং প্রাণীবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী লংঙি স্রো। তারা পাঁচজনই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ সেশনের শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, অপহৃত শিক্ষার্থীরা বিজু উৎসব উপলক্ষে বন্ধুদের সঙ্গে রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে বেড়াতে যান। উৎসব শেষে মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফেরার উদ্দেশ্যে বাঘাইছড়ি থেকে দিঘীনালা হয়ে খাগড়াছড়ি সদরে চলে আসেন। ওইদিন চট্টগ্রামগামী বাসের টিকিট না পেয়ে তারা খাগড়াছড়ির কুকিছড়া নামক জায়গায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে রাত্রিযাপন করেন। বুধবার সকালে খাগড়াছড়ির কুকিছড়া থেকে টমটম গাড়ি যোগে খাগড়াছড়ি সদরে আসার পথে গিরিফুল এলাকায় একদল অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী তাদের গাড়ি আটকায় এবং টমটম গাড়ির ড্রাইভারসহ ওই ৫ শিক্ষার্থীকে সেখান থেকে অজ্ঞাত স্থানে অপহরণ করে নিয়ে যায়।
অনতিবিলম্বে অপহরণকৃত ছাত্রদের মুক্তির দাবি জানিয়ে সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদ এর প্রধান সমন্বয়ক মোঃ মোস্তফা আল ইহযায বলেন, পাহাড়ি সশস্ত্র সংগঠনগুলোর আধিপত্য বিস্তার নিয়ে হরহমেশাই পার্বত্য অঞ্চলে গোলাগুলি-সংঘর্ষ হচ্ছে। গত ৮ মাসে তিন পার্বত্য জেলায় এমন সংঘর্ষ হয়েছে ৪০টিরও বেশি। এতে খুন হয়েছেন অন্তত ১০ জনের অধিক। জেএসএস-ইউপিডিএফ দ্বন্দ্বে একের পর এক ঘটছে এসব সংঘর্ষ-হত্যা।গত ১৯ মার্চ খাগড়াছড়ির যামিনী পাড়া এলাকার মায়াপাড়ায় জেএসএস সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত হন ইউপিডিএফ সদস্য সুবীর ত্রিপুরা। এর আগে ১২ মার্চ রাঙামাটির রূপবানপাড়ায় জেএসএস এর কালেক্টর রূপবান চাকমাকে হত্যার অভিযোগ উঠে ইউপিডিএফ এর বিরুদ্ধে। প্রতিশোধ হিসেবে ১৬ মার্চ কুতুবছড়ি এলাকায় ইউপিডিএফ কালেক্টর নির্মল চাকমাকে হত্যা করে জেএসএস। দুই সংগঠনের এই সংঘাতে আতঙ্কিত পাহাড়ের স্থানীয় জন-মানুষ।
পরিসংখ্যান বলছে, সবশেষ গত তিন মাসে জেএসএস এবং ইউপিডিএফসহ চার আঞ্চলিক সংগঠনের হাতে অপহরণ ও জিম্মি হয়েছে ২৩ জন। প্রাণ গেছে ৬ জনের। আর ২০০৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত অপহরণের শিকার ১ হাজার ২৫৩ জন আর খুনের শিকার হয়েছেন ৫২৬ জন।তাই এই ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত ও সকল হত্যাযজ্ঞ নিরসনে পাহাড়ের রক্তস্রোতের অবসান ঘটাতে প্রত্যাহারকৃত সেনাক্যাম্প পূণস্থাপন করে পাহাড়ে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা আজ পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের সমসাময়িক গণদাবীতে পরিণত হয়েছে।
সম্পাদক: বিপ্লব কুমার দাস,প্রকাশক:আবছার উদ্দিন