

ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বিশ্ব গঠনে “ওশর”ফরজ একটি ইবাদত।
মোঃ রেজাউল করিম
স্টাফ রিপোর্টারঃ ময়মনসিংহ।
আমাদের বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। এই সোনার বাংলার মাতৃভূমিতে সব ধরনের ফসল ফলে। কিন্তু আমরা এই ফসলের ওশর/যাকাত দিতে হবে আমরা অনেকে জানিনা। এ বিষয়ে
পবিত্র কোরআনের সুরা-৬ আনআমের ১৪১ নং আয়াত “যখন তোমরা ফসল কাটবে সেদিনই ফসলের দায় (উশর বা যাকাত) প্রদান করবে কিন্তু অপচয় করবে না,আল্লাহ অপচয়কারী কে পছন্দ করেন না ”।
ওশর শুধু দান নয়, বরং এক ফরজ ইবাদত যা সমাজের অর্থনৈতিক ভারসাম্য ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। ওশর জেনে শুনে বুঝে,ভুলে কিংবা অবহেলায় যথাযথ আদায় না করে সারা বিশ্বকে চরম দারিদ্র্যতার অভিশাপে অভিশপ্ত করছি। যার ফলে আল্লাহর ক্রোধ বৃদ্ধি পেতে পারে । আমরা পাপের পাল্লা ভারী করছি।যা পরকালে জাহান্নাম আমাদেরকে স্বাগত জানাচ্ছে।
ভূমিতে উৎপাদিত ফসলের যাকাতকে ‘ওশর’ বলে। যেসব জমি বা ভূমিতে শস্য উৎপাদনে সেচের প্রয়োজন হয় না প্রাকৃতিক পানি দ্বারা সম্ভব সেসব ক্ষেত্রে ফসলের ১০%।
যদি ফসল উৎপাদনে সেচের প্রয়োজন হয় ওশরের হার ৫%। (সহিহ বুখারি ও তিরমিজি)
আংশিক সেচ ও আংশিক প্রাকৃতিক পানি দ্বারা উৎপাদিত শস্যের ওশরের হার ৭.৫%।
বাংলাদেশে বার্ষিক ধান,গম ও ভুট্টার উৎপাদন প্রায় ৪ কোটি ৫০ লক্ষ টন,সবজি তিন কোটি টন, ফল এক কোটি ৫০ লক্ষ টন। নূন্যতম ৫% হিসেবে যদি ওশর আদায় করে চরম দরিদ্র এক কোটি লোকর মধ্যে সমহারে বণ্টন করলে,বার্ষিক প্রতি জন পাবে ২২৫কেজি (ধান গম ভুট্টা,)১৫০কেজি সবজি ও ৭৫ কেজি ফল যার মাধ্যমে খাদ্যের মত প্রধান মৌলিক চাহিদা পূরণ হবে সাচ্ছন্দ্যে।
আমাদের ঈমানের উজ্জলতা কম হেতু সংশয় হয় উচ্চ মূল্যের বাজারে ওশর আদায় করলে বড় ক্ষতির সম্মুখীন হব। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ সূরা রূম ৩৯ নং আয়াতে বলেছেন“আর তোমরা যে যাকাত দাও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য,তারাই (আসল)বহুগুণ লাভকারী।”
এভাবে যদি যাকাত যথাযথভাবে আদায় ও বন্টন হয় তাহলে এই এক কোটি লোকের বস্ত্র,বাসস্থান,শিক্ষা ও চিকিৎসার সুব্যবস্থা হবে।দেশ হবে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, পরিবেশ হবে উন্নত। মানুষের মাঝে জাগ্রত হবে ভ্রাতৃত্ববোধে ও বন্ধুত্বের নিবিড় বন্ধন। উৎপাদন ও ব্যবহারে বাড়বে বরকত।এভাবে সারা বিশ্বের মুসলমানরা ওশর ও যাকাত পালন করে বিশ্বে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যতা শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসতে পারবে।
যেসব উৎপাদনের ওশর প্রদান করতে হয়—খাদ্যশস্য,ফল ফলাদি,শাক সবজি,অর্থকরী ফসল যেমন:ধান,গম,যব,ভুট্টা, খেজুর,আঙুর আম,জাম, কাঁঠাল তরমুজ,লাউ,কুমড়া, ঝিঙে,বেগুন,আলু,কচু পেঁয়াজ, রসুন,আদা,হলুদ,সয়াবিন,পাট, তুলা,রেশম,আখ,লবণ ইত্যাদি।
ওশরের নিসাবের ব্যাপারে দুটি মত আছে। ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর মতে,ফসলের পরিমাণ যা-ই হোক তা থেকেই ওশর আদায় করতে হবে।
তবে অন্য ইমামদের মতে উৎপাদিত ফসল ১৮ মন ৩০ কেজি থেকে ২৫ মন (বিভিন্ন ইমামদের মতামত) কম হলে উশর প্রদান করতে হবে না।
সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ক্ষেত্রেও ওশরের বিধান প্রযোজ্য।
অনেকে মনে করেন সরকারকে খাজনা দেন এ কারণে ওশর দিতে হবে না। সরকার ভূমি ব্যবস্থাপনার জন্য যে নামমাত্র খাজনা নেয় তা ভূমি ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনিক ব্যয় হিসাবে । দরিদ্রদের জন্য ওশর বা সরকারি লিজ হিসাবে নয়।
যাকাত যে সকল খাতে ব্যয় করা যায় ‘ওশর’ সে সকল খাতে ব্যয় করা যায়,ইসলামের দৃষ্টিতে।
বাংলাদেশের জমি উশরী কিনা এ ব্যাপারে একাধিক মত থাকলেও হানাফী মাযহাব ও অন্যান্য আলেম-ওলামার অধিকাংশই ওশরী হিসাবে মতামত প্রদান করেছেন।
আমাদের দেশের অপরিচিত ও অপ্রচলিত ওশর ফরজটি সৌদি আরব, সুদান ও ইরান ভালোভাবে প্রচলিত।
আসুন আমরা ওশর ও যাকাত প্রদান করি। অপচয় কে না বলি। বিশ্বকে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত গড়ে তুলি। আল্লাহর রহমত ও জান্নাত কে স্বাগত জানাই।
বিশেষ অনুরোধ: এই হারিয়ে যাওয়া ফরজ কে ব্যাপক প্রচার ও প্রসার করে বহুল প্রচলিত করার কাজে সকলে আত্মনিয়োগ করি।
সতর্কতা: অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। ওশর অপ্রচলিত ফরজ বিধায় কোন কোন আলেমগণের এই সম্পর্কে তথ্য উপাত্ত মুখস্ত নন।তাৎক্ষণিক প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলে যথাযথ উত্তর পাওয়া কষ্টসাধ্য বলে আমি মনে করি।
বরং সময় নিয়ে গভীরভাবে স্টাডি করে উত্তর নিলে ভালো হয়।
আলোচকঃ-
মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান সরকার।
ম্যানেজিং ডিরেক্টরঃ-
শাহা শের আলী গ্রুপ-
(অপারেশনঃসিভিল)