বুধবার, ০৪ জুন ২০২৫, ০৬:৩৫ পূর্বাহ্ন
Headline
কামরাব বাজারে গরু হাটের ইজারা নিলেও স্কুল মাঠে গরুর বাজার দেখার কেউ নাই! আইন ও সাংবাদিকতা—দশক ধরে দুই পথেই দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন অ্যাড তাপস চন্দ্র সরকার কুমিল্লা বুড়িচং প্রেসক্লাবের মাসিক সভা অনুষ্ঠিত বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম ধর্ম বর্ণ ভিন্ন মত সবার জন্য খেলাফত হয়তো খেলাফত নয়তো শাহাদাত বাউফলে কৃষি অধিদপ্তরের আয়োজনে পার্টনার ফিল্ড স্কুল সভা অনুষ্ঠিত কুমিল্লা চান্দিনায় স্কুল মাঠ থেকে গরু হাট সরাতে গেলে ম্যাজিস্ট্রেটের সাথে বিশৃঙ্খলা শিবপুরে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে আপন বড়ো ভাইকে বেধরক পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম গোপালগঞ্জে গণঅভ্যুত্থানে আহতদের মাঝে স্বাস্থ্য কার্ড বিতরণ। মোল্লাহাটে মধুমতি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মানবিক সহায়তা সামগ্রী বিতরণ। বাংলাদেশ সাংবাদিক লেখক ঐক্য ফোরামের রিয়াদুল ইসলাম জামাল আজীবন বহিষ্কার –
Headline
Wellcome to our website...
খেলাপি ঋণের বোঝায় ঝুঁকিতে আর্থিক খাত।
/ ১১ Time View
Update : সোমবার, ২ জুন, ২০২৫, ৮:০৮ পূর্বাহ্ন

খেলাপি ঋণের বোঝায় ঝুঁকিতে আর্থিক খাত।

মোঃ সহিদুল ইসলাম সুমন।

যখন কোনো কারণে চুক্তির শর্ত অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় পর কোনো ঋণ বা ঋণের কিস্তি ফেরত পাওয়া যায় না তখন ওই ঋণই খেলাপি ঋণ।বর্তমান বাংলাদেশের অর্থনীতি তথা ব্যাংক খাতের প্রধান সমস্যা এই খেলাপি ঋণ।কোনো কড়াকড়ি, কোনো পদক্ষেপ, কোনো সংস্কারই খেলাপি ঋণের লাগাম টানতে পারছে না। ফলে দিন দিনই চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ছে খেলাপি ঋণের অঙ্ক। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানো পতিত স্বীরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে যে অর্থ বের করে নিয়েছিল, তা এখন খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হতে শুরু করেছে। বর্তমানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ তিন লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। যা এখন সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকা ছুঁই ছুঁই করছে। দেশের ব্যাংকব্যবস্থায় গত ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা, এই বিপুল পরিমাণ অনাদায়ী ঋণের পাশাপাশি আরো ৪৪ হাজার কোটি টাকা নতুন করে খেলাপি হওয়ার পথে। যা গত সেপ্টেম্বর শেষে ছিল ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকেই খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৬০ হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা। ডিসেম্বর শেষে মোট বিতরণ করা ঋণের ২০ দশমিক ২০ শতাংশ খেলাপি হয়ে গেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর এসব তথ্য দেন। একদিকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, অন্যদিকে ব্যাংক খাতের দুর্বলতা। এই দুটি মিলে সামগ্রিক অর্থনীতিকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এসএমএ হিসেবে চিহ্নিত ৪৪ হাজার কোটি টাকা যদি খেলাপিতে রূপ নেয়, তবে দেশের ব্যাংক খাতের স্থিতিশীলতা আরো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংককে সময়ক্ষেপণ না করে এখনই সুদূরপ্রসারী ও কঠোর নীতি গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে আর্থিক খাতের এই টালমাটাল অবস্থা পুরো অর্থনীতিকে গভীর সংকটে ফেলবে।
গত জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে বা ওই তিন মাসে ব্যাংকব্যবস্থায় খেলাপি ঋণ বাড়ে ৭৩ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। এর মানে গত ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৭৩ কোটি টাকা।গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে মোট ঋণ ও অগ্রিমের পরিমাণ ১৭ লাখ ১১ হাজার ৪০২ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর শেষে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকে মোট বিতরণ করা ঋণের মধ্যে খেলাপি ঋণের হার কিছুটা বেড়েছে। এই হার আগের প্রান্তিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) থেকে কিছুটা বেড়ে ৪২ দশমিক ৮৩ শতাংশ এবং বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকে এই হার ১৫ দশমিক ৬০ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, এখন কোনো ঋণের কিস্তি তিন মাস বকেয়া থাকলেই তা খেলাপি হিসেবে বিবেচিত হবে। যা আগে এই সময়সীমা ছিল ছয় মাস। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত মেনে ঋণখেলাপির নীতিমালা বাস্তায়ন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশের খেলাপি ঋণের ইতিহাস থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে ঋণখেলাপিদের প্রথম তলিকা প্রকাশ করা হয় স্বাধীনতার ২০ বছর পর, ১৯৯১ সালে ১৯ মে। খুবই ব্যতিক্রম পদ্ধতিতে সেই তালিকা প্রকাশ করে তৎকালীন বিএনপি সরকার।। রীতিমতো পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে এই তালিকা প্রকাশ করা হয়।এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে জয়ী হয় বিএনপি। ১৯ মার্চ বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হলে অর্থমন্ত্রী হয়েছিলেন এম সাইফুর রহমান। আর এর ঠিক দুই মাসের মাথায় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে ঋণখেলাপির তালিকা প্রকাশ করা ছিল দেশের আর্থিক খাতের ইতিহাসে একটি বড় ঘটনা। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রকাশিত ঐ তালিকায় ছিল ১৭১টি প্রতিষ্ঠানের নাম। আইসিবির তালিকায় ছিল ৩৪টি নাম। রূপালী ব্যাংক প্রকাশ করেছিল খেলাপি ৫১ প্রতিষ্ঠানের নাম। সোনালী ব্যাংক ৬৩ এবং অগ্রণী ব্যাংকের প্রকাশিত তালিকায় ছিল ৭১ প্রতিষ্ঠানের নাম। তালিকায় থাকা উল্লেখযোগ্য নাম ছিল বাংলাদেশ ম্যাচ কোম্পানি লিমিটেড, শিনান (বাংলাদেশ) লিমিটেড, বি এইচ ইঞ্জিনিয়ারিং, মুসলিন কটন মিলস, এম আর ট্যানারি, এ গফুর জুট বেলিং, ইমারল্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, কাশেম গ্রুপ, শাহ গ্রুপ, ঢাকা রি-রোলিং, ইস্টার্ন ফার্মা, বসাক লিমিটেড, রোমিও গার্মেন্টস, বরিশাল ফিশিং, হাইস্পিড নেভিগেশন, টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রিজ, নর্দান ডিস্টিলারিজ, সালেহ কার্পেটস, কে অ্যান্ড কিউ, আহমেদ জুটেক্স, ক্রিসেন্ট জুট, লিবরা ফার্মা, রূপণ ওয়েল, হোটেল হলিডে ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল সেন্ট মার্টিন, নিপ্পন মোটরস ইত্যাদি। বাংলাদেশের ইতিহাসে সেটাই ছিল প্রথম ঋণখেলাপিদের তালিকা প্রকাশ।যার ধারাবাহিকতা পরবর্তীতে আর সেই ভাবে রক্ষা করা হয়নি। এর মধ্য দিয়ে দেশের মানুষ প্রথম জানতে পেরেছিল, কারা কারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ফেরত দেননি। ঋণখেলাপিদের প্রথম তালিকা চার দিন ধরে প্রকাশ করা হয়েছিল একাধিক পত্রিকায়। বাংলাদেশ ব্যাংক ছাড়াও সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক এবং ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) আলাদাভাবে তালিকা প্রকাশ করেছিল। সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ ছিল বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংকে। তার পরই ছিল বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থার অবস্থান। ৮০-এর দশকে, এরশাদ আমলে এই দুই প্রতিষ্ঠান থেকেই ঋণ নিয়ে ফেরত না দেওয়ার ঘটনা বেশি ঘটেছে। ওই দুই প্রতিষ্ঠান তত দিনে কার্যত অচল হয়ে যায়। এই দুই আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণখেলাপির তালিকা শেষ পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ ভাবে প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে, তখন মোট খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। এর পর থেকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েই চলছে। অর্থনীতিবিদেরা অনেক দিন ধরেই অভিযোগ করছেন, তৎকালীন সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ লুটপাট হয়েছে, যার একটা বড় অংশই বিদেশে পাচার হয়েছে। ঋণের বোঝা রাজনৈতিক ব্যবস্থার ধরনের সঙ্গে সম্পর্কিত। স্বৈরশাসন ও কর্তৃত্ববাদী শাসনামলেই ঋণ দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ঋণ রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতাই ক্ষমতা ধরে রাখার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
গত ৫ আগস্ট স্বীরাচার সরকার পতনের পর খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র বের হতে শুরু করেছে। সাবেক সরকারের আমলে ব্যাংক থেকে প্রভাবশালীদের বড় অঙ্কের ঋণ দিতে নানা সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি খেলাপি ঋণ কাগজে-কলমে কম দেখাতে নেওয়া হয়েছিল একের পর এক নীতি। সরকার পরিবর্তনের পর সেই নীতি থেকে সরে এসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এখন প্রশ্ন হলো এই খেলাপি ঋণ থেকে পরিত্রাণের উপায় কী? কীভাবে আমরা এই খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমাতে পারি; সে সম্পর্কে কিছুটা জেনে নেয়া যাক-
১. নৈতিকতার চর্চা করা; ২. ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো রাজনৈতিক নেতা এবং ব্যাংক পরিচালকদের প্রভাবমুক্ত করা; ৩. সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সংঘবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে; ৪. কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ সব ব্যাংককে শুধু খেলাপি ঋণসাপেক্ষে আলাদা করে মনিটরিং সেল গঠন করতে হবে; ৫. যাচাই-বাছাই করে ঋণ প্রদান এবং বিতর্কিত ঋণের যথাযথ পর্যবেক্ষণ; ৬. সুশাসন নিশ্চিত করা এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সুদক্ষ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা; ৭. ঋণ প্রদানে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি বন্ধ করা; ৮. অর্থ ঋণ আদালতসহ আইনি প্রক্রিয়া আরও উন্নত ও সংস্কার করা; ৯. খেলাপি ঋণগ্রহীতাদের কালো তালিকা প্রকাশ এবং ভবিষ্যতে ঋণ প্রদানে বিরত থাকা; ১০. ঋণের বিপরীতে বন্ধকি সম্পত্তির সঠিক চলতি বাজারমূল্য নিরূপণ করা; ১১. একই খাতে বেশি ঋণ না দিয়ে বিভিন্ন খাতে ঋণ প্রদান করা ইত্যাদি।
ঋণের বোঝা রাজনৈতিক ব্যবস্থার ধরনের সঙ্গে সম্পর্কিত। স্বৈরশাসন ও কর্তৃত্ববাদী শাসনামলেই ঋণ দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ঋণ রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতাই ক্ষমতা ধরে রাখার হাতিয়ার হিসেবে ও ব্যবহৃত হয়। এমনিতে পতিত সরকার জটিল অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে রেখে গেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে। উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, রাজস্ব খাতে দুর্নীতি, বাজেট বাস্তবায়নে ধীরগতি, ব্যাংক খাতে তারল্যসংকট এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাসের মতো বহুমুখী চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান।তার মধ্যে খেলাপি ঋণের জন্য সাধারণত ব্যাংকে যখন টাকার পরিমাণ কমে যায়,তৈরি হয় তারল্য সংকট। আর যখন তারল্য সংকট হয় তখন ব্যাংকের ঋণ দেয়ার সক্ষমতাও কমে যায়।তখন যারা বিনিয়োগে যেতে চান; তারা ঋণ পান না, তাই বিনিয়োগে যেতে পারেন না। আর বিনিয়োগ কমে গেলে অর্থনীতির ওপর নানা প্রভাব পড়ে। ফলে অর্থনীতির ‘গ্রোথ’ কমে যায়। কমে যায় কর্মসংস্থানের সুযোগ। খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংককে আগামীতে নতুন ঋণবিন্যাস নীতি বাস্তবায়নে বেগ পেতে হবে। খেলাপি ঋণের সংজ্ঞার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যদি বৈশ্বিক মানে ফিরে যায়, তাহলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও বেড়ে যেতে পারে, যাতে আইএমএফের শর্ত মানা দুষ্কর হতে পারে। আইএমএফের শর্ত হচ্ছে, ২০২৬ সাল নাগাদ রাষ্ট্রীয় ঋণদাতাদের ক্ষেত্রে মোট বিতরণকৃত ঋণে খেলাপি ঋণের অনুপাত হতে হবে ১০ শতাংশ এবং বেসরকারি ব্যাংকের ক্ষেত্রে এই অনুপাতকে হতে হবে ৫ শতাংশ। তাই দেশকে এগিয়ে নিতে হলে এই দুষ্টচক্র ভাঙতে হবে।
লেখক : অর্থনৈতিক বিশ্লেষক, কলামিস্ট ও সদস্য, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ ।
Email: [email protected]

আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
Our Like Page