

চর রমনী মোহন ইউনিয়নে প্রবাসীর বাড়ি নির্মাণে আ.লীগ নেতাদের বাধার অভিযোগ
মোঃ রাসেল স্টাফ রিপোর্টার :
লক্ষ্মীপুরে ওমান প্রবাসী আনোয়ার হোসেনের ঘর নির্মাণে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে। তাদের বিভিন্ন হুমকি-ধামকি ও বাধায় বন্ধ হয়ে যায় নির্মাণ কাজ। গত বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) সাংবাদিকদের কাছে এমন অভিযোগ করেন প্রবাসীর স্ত্রী হোসনেয়ারা বেগম।
এদিকে ঘরের কাজ না হওয়ায় ভয় ও আতঙ্কে দিন কাটছে প্রবাসী পরিবারের। মানবেতর জীবনযাপন করছেন খুপরি ঘরে।
আনোয়ার হোসেন লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চর রমনি মোহন ইউনিয়নের চর আলী হাসান এলাকার সাহাব উদ্দিন বেপারীর ছেলে। অন্যদিকে অভিযুক্তরা হলেন, একই এলাকার আবদুর রব হাওলাদারের ছেলে আহছান উল্লাহ প্রকাশ আহছান মাস্টার, আনোয়ার হোসেন দুলাল ও আমজাদ হোসেন। দুলালের ছেলে রিপন হোসেন ও প্রতিবেশী আক্তার হোসেনসহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজন। অভিযুক্ত আহছান মাস্টারসহ সকলে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে জানা যায়।
জানা গেছে, আনোয়ার হোসেন গত ১৬ বছর পূর্বে সুলতান আহম্মদ থেকে ২০ শতাংশ জমি ক্রয় করেন। এরপর থেকে বাড়ি নির্মাণ করে ভোগদখল করছেন। কিন্তু কয়েকদিন পূর্বে জমিটি নিয়ে আদালতে মামলা রয়েছে উল্লেখ করে একটি সাইনবোর্ড সেখানে ঝুলিয়ে রাখেন আহছান উল্লাহ। এছাড়া আনোয়ারদের বিভিন্ন হুমকি-ধামকি ও বাড়ি নির্মাণে বাধা দিচ্ছেন।
বিরোধীয় জমিটি ওয়ারিশি নয় ক্রয়সূত্রে মালিক হয়ে আনোয়ারের থেকে বিক্রি করেছেন সুলতান আহম্মদ। যা নিয়ে তাঁর ভাইদের সঙ্গে কোন বিরোধ নেই। তবুও বাবা-মায়ের জমি নিয়ে আদালতে করা বন্টননামা মামলায় জমিটি অন্তর্ভূক্ত বলে দাবি করছেন আহছান উল্লাহরা।
প্রবাসী আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী হোসনেয়ারা বেগম প্রকাশ হাসিনা বলেন, দীর্ঘদিন ভোগদখল করলেও কখনো আহছান ও রিপনরা বাধা দেয়নি। এখন নতুন ঘর নির্মাণ করবো তখনি বাধা ও হুমকি দিচ্ছে। তাদের ভয়ে ঘরের কাজ শুরু করতে পারেনি। অন্যদিকে পুরাতন ঘর ভাঙার কারনে ছোট্ট একটি খুপড়ি ঘরে বর্তমানে বসবাস করছি।
আরও বলেন, সুলতান আহম্মদ থেকে ক্রয়কৃত ১৫৯৩ দাগে (সাবেক) ২ একরের মতো জমি রয়েছে। যার অধিকাংশ জমি তিনি বিক্রি করে দিয়েছেন। কিন্তু আহছান উল্লাহ অন্য কোন জমিতে বাধা দেননি। পেশিশক্তি দেখিয়ে আমাদের জমিতে বাধা দিচ্ছেন। এবিষয়ে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিবো।
সুলতান আহম্মদ বলেন, জমিটি দলিলমূলে মায়ের থেকে ক্রয় করেছি। এরপর বিভিন্ন সময় কিছু জমি বিক্রি করেছি। বিক্রিত কয়েকটি দলিলে আমার মা জামিলা খাতুন সাক্ষীও দিয়েছেন। মায়ের থেকে ক্রয়কৃত জমি নিয়ে ৩০ বছরের অধিক সময়ে কখনো ঝামেলা হয়নি। কিন্তু গত কয়েক দিন পূর্বে আমার ভাই আহছানরা আনোয়ারদের ঘর নির্মাণে বাধা ও মারধরের হুমকি দেয়। কেন তারা বাধা দিয়েছে, সেটি আমার জানা নেই। তাছাড়া এই জমি নিয়ে আদালতে কোন মামলা নেই।
হুমকি-ধামকির অভিযোগগুলো অস্বীকার করে আহছান উল্লাহ জানান, আনোয়ার যে জমিটি সুলতান আহম্মদ থেকে ক্রয় করেছেন। সেই জমির মালিক তিনি নয়। সুলতানের দাবিকৃত হেবানামা দলিলটি মা জামিলা খাতুন নিজে বাতিল করেছেন। যার প্রমানপত্রও রয়েছে। তবে সাংবাদিকদের আহছান উল্লাহ দলিল বাতিলের কোন প্রমাণ দেখায়নি।
সুলতান আহম্মদের ছেলে বাবর হোসেন বলেন, চাচা ও চাচাতো ভাইরা খারাপ প্রকৃতির মানুষ। বিগত সময় একাধিকবার আমাদের মারধর করেছে। আমাদের জমিও দখলে রেখেছে। আওয়ামী লীগের নেতা পরিচয় দিয়ে এসব অপকর্ম করে যাচ্ছেন তারা।
আরও বলেন, চাচাদের সঙ্গে এসব বিরোধ নিয়ে থানা ও স্থানীয়ভাবে একাধিক শালিস বৈঠক হয়েছে। কাগজপত্র সঠিক থাকায় প্রত্যেকটি বৈঠকের সিদ্ধান্ত আমাদের পক্ষে এসেছে। তবুও পেশীশক্তি খাটিয়ে জমি দখল ও বিভিন্ন হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছে। তাছাড়া দাদীর থেকে ক্রয়কৃত দলিলটি বাদ হয়েছে মর্মে চাচার দাবিটি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা বলেন, আনোয়ারের ক্রয়কৃত জমি নিয়ে কোন বিরোধ নেই। তবুও জোরপূর্বক আহছান উল্লাহরা বাধা দিচ্ছেন। মূলত, রাস্তার পাশে হওয়ায় জমিতে কুনজর পড়ে তাদের। এখন ঘর নির্মাণে বাধা ও বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে জমিটি দখলের পায়তারা করছে আহছান ও রিপনরা।