ঠাকুরগাঁওয়ে বিজিবির বিরুদ্ধে কৃষকদের মারপিটের অভিযোগ
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার একটি সীমান্ত এলাকায় নাগর নদী থেকে ঘাস আনতে গিয়ে বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন সদস্যদের হাতে মারপিটের স্বীকার হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার বকুয়া ইউনিয়নের কাঁদশুকা গ্রামের ভুক্তভোগী কৃষক-কৃষানী’রা এমনি অভিযোগ করেন। তবে বিজিবির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে বিষয়টি বানোয়াট। সুষ্ঠু বিচারের দাবি স্থানীয়দের।
সারেজমিনে গিয়ে যানা যায়,গত ৪ জুলাই দুপুরে ঠাকুরগাঁও হরিপুর উপজেলার বকুয়া ইউনিয়নের বুজরুক সীমান্ত এলাকার নাগর নদীর পশ্চিম দিকে ঘাস কাটতে যায় কাঁদশুকা গ্রামের ৭ জন নারী পুরুষ(কৃষক)। তারা সকলেই কৃষক। ঘাস কেটে বাসায় ফেরার সময় বুজরুক সীমান্ত ফাঁড়ির বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন সদস্যরা তাদের ডাক দেন। কৃষকরা তাদের কথায় সাড়া দিয়ে এগিয়ে যান। কথা বলার এক পর্যায়ে ওই কৃষকদের (নারী-পুরুষ) হাতে থাকা ঘাস কাটার যন্ত্র কেড়ে নিয়ে তাদের মারপিট শুরু করে দেন বিজিবির সদস্যরা। পরে পালিয়ে আসে সকলেই। এরপর রাতেই অনেকে ভর্তি হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে পরদিন সকালেই হাসপাতাল থেকে চলে যান সকলেই।
বিষয়টি এলাকায় ছড়িয়ে পড়ার পর আতঙ্কে রয়েছেন এলাকাবাসী। ঘাস কাটতে যাওয়া ওই কৃষকদের (নারী-পুরুষ) অভিযোগ কোন কারণ ছাড়াই বিজিবির লোকেরা তাদের মারপিট শুরু করেন। ভুক্তভোগী ও স্থানীয়দের দাবি সুষ্ঠু বিচারের।
ঘটনার বিষয় নিয়ে কথা বলার জন্য হরিপুর উপজেলার বুজরুক সীমান্ত ফাঁড়ি তে যাওয়া হলে সেখানে কর্মরত বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের সদস্যরা সাংবাদিক দেখেই কথা না বলে ফাঁড়ির গেট লাগিয়ে দেন। যদিও ঠাকুরগাঁও ৫০ বিজিবির অধিনায়কের দাবি ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসীর এমনি অভিযোগ ভিত্তিহিন। তবে বিজিবির কেই কারো সাথে অন্যায় করলে ছাড় দেয়া হবেনা বলেও যানান তিনি।
এদিকে বিজিবির অধিনায়দের ওই গ্রামের তিনজন ব্যক্তি ভারত থেকে আসতেছিলেন। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তারা বিজিবির সদস্যদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। এসময় বিজিবির লোকেরা তাদের বাধা দিয়ে সেখান থেকে পাঠিয়ে দেয়।
ভুক্তভোগী রমজান আলীর বাবা এনামুল হক বলেন,আমার জমিতে আমি যদি যেতে না পাড়ি কে যাবে?? আমরা কৃষক মানুষ জমিতে আবাদ করতে গিয়ে যদি মারপিট খাইতে হয় তাহলে কি বলার থাকে। আমার ছেলে নদীর অপর প্রান্ত থেকে ঘাস কাটে নিয়ে আসার সময় কোন কারণ ছাড়া বিজিবির লোকেরা মারপিট করলো। আমি এটার সুষ্ঠু বিচার চাই।
আরেক ভুক্তভোগী বেলাল হোসেনের স্ত্রী শুকতারা পারভিন বলেন,নদীর ওপারে আমার স্বামী আমি সহ কয়েকজন। আমার বাসায় আসার সময় নদীর পাড়ে বিজিবির লোকেরা আমাদের ডাক দেয়। আমরা কাছে যাবার পরে তারা আমাদের ঘাস কাটার যন্ত্র কৈচা কেড়ে নিয়ে মারপিট শুরু করে। পরে আমি সেখান থেকে পালিয়ে আসি।
স্থানীয় বাসিন্দা জয়নুল হক সহ বেশ কয়েকজন বলেন,নদীর ওপারে আমাদের সব কৃষি আবাদ। বিজিবির যদি কোন সমস্যা থাকে তাহলে সেটি বলা দরকার ছিলো। কোন কিছু না বলে এভাবে মারপিট করা ঠিক করেনি। আমাদের গ্রামের ছেলেরা যদি দোষও করে থাকে তাহলে তাদের আইনের হাতে তুলে দিবে। কোন কিছু বলা নেই মারপিট করলো এটা ঠিক নয়। এটা একটা সুষ্ঠু বিচার হওয়ার দরকার।
ঠাকুরগাঁও ৫০ ব্যাটালিয়ন এর অধিনায়ক লেঃ কর্নেল মোঃ তানজীর আহম্মদ বলেন, বিষয়টি পুরাই ভিত্তিহীন। মূলত সেদিন ৩জন ব্যক্তি ইন্ডিয়া থেকে আসতেছিলেন। পরে বিজিবির টহল পার্টি তাদের জিজ্ঞাবাদ করা শুরু করলে তারা আমাদের সদস্যদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। এখানে তাদের মারপিটের কোন প্রশ্নই উঠেনা। মূলত কিছু মানুষ বিজিবির সন্মান ক্ষুন্ন করার জন্য এই অভিযোগ তুলছেন। সীমান্ত নজর দারি কঠোর রয়েছে। বিজিবি সব সময় কাজ করে যাচ্ছে।
সম্পাদক: বিপ্লব কুমার দাস,প্রকাশক:আবছার উদ্দিন