

নারীর অলংকার
— মো. মোস্তাফিজুর রহমান রুবেল
নারী — সে শুধু একজন মানুষ নয়, সে এক অনন্ত রহস্যের প্রতীক। কখনো সে মা, কখনো বোন, কখনো প্রেমিকা, কখনো স্ত্রী, কখনো এক বিদূষী সমাজদ্রষ্টা। যুগ যুগ ধরে নারীকে ঘিরে রচিত হয়েছে অজস্র কবিতা, গল্প, মহাকাব্য। আর নারীর অলংকার — এ শুধু গহনার ঝলক নয়, বরং তার চারিত্রিক গুণাবলি, আত্মার দীপ্তি, এবং জীবনবোধের গভীর সৌন্দর্যের এক সংজ্ঞা।
প্রাচীন যুগে নারীর অলংকার বলতে বোঝানো হতো সোনা, রুপা, মুক্তা বা হীরার দ্যুতি। আজও এই অলংকার নারীকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে তোলে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অলংকারের সংজ্ঞা বদলেছে। আজ নারীর শ্রেষ্ঠ অলংকার তার শিক্ষা, আত্মমর্যাদা, এবং নৈতিক দৃঢ়তা।
লজ্জা, শালীনতা, সহানুভূতি, ধৈর্য, ক্ষমাশীলতা — এইসব গুণ একজন নারীকে করে তোলে সত্যিকারের গহনা-ভূষিতা। যে নারী নিজেকে সম্মান করতে জানে, অপরকে সম্মান দেয়, জ্ঞানের আলোকধারায় নিজেকে গড়তে চায় — সে-ই আধুনিক নারীর প্রতীক, সে-ই আসল অলংকারে বিভূষিতা।
একজন সুশিক্ষিত নারী একটি জাতির ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারে। তাই বলা হয় — “শিক্ষিত নারীই জাতির শ্রেষ্ঠ অলংকার।” সে কেবল ঘর নয়, গড়তে জানে সমাজ ও সভ্যতাও। তার গলায় সোনার হার না থাকলেও, যদি থাকে জ্ঞানের আলো, তাহলেই সে হয়ে ওঠে দীপ্তিময়।
আজকের দিনে নারীকে শুধুই বাহ্যিক সাজে বন্দি রাখা অন্যায়। তাকে সুযোগ দিতে হবে তার অন্তর্নিহিত অলংকারগুলো বিকাশের — যেখানে সে নিজেই নিজের অহংকার হতে পারে। কারণ একবিংশ শতাব্দীর নারী আর কারো ছায়ায় বাঁচে না — সে নিজেই হয়ে ওঠে আলো।
শেষকথা:
নারীর অলংকার কেবল তার পরিধেয় নয়, বরং তার অন্তর্লীন সৌন্দর্য — যে সৌন্দর্য শিক্ষা, চারিত্রিক দৃঢ়তা ও মানবিকতায় পূর্ণ। সেই নারীই সমাজের গর্ব, সেই নারীই সত্যিকারের অলংকার।
সারমর্ম
“নারীর অলংকার” প্রবন্ধে লেখক নারী-জীবনের সৌন্দর্য ও মূল্যবোধের কথা তুলে ধরেছেন। প্রাচীন সময়ের মতো এখন আর অলংকার কেবল সোনা-রুপা নয় — বরং নারীর প্রকৃত অলংকার হলো তার লজ্জা, শিক্ষা, শালীনতা, আত্মমর্যাদা ও চারিত্রিক গুণাবলি। একজন সুশিক্ষিত নারী কেবল নিজের নয়, পুরো সমাজের গর্ব হতে পারে। বাহ্যিক সাজ নয়, বরং মানবিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক গুণই নারীর প্রকৃত অলংকার — এই মেসেজই লেখক সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন।
লেখক পরিচিতি
মো. মোস্তাফিজুর রহমান রুবেল একজন তরুণ সাহিত্যিক, যিনি কাব্যনাট্য, মহাকাব্যিক উপন্যাস ও সামাজিক ভাবনামূলক রচনায় পারদর্শী। তিনি সমসাময়িক ও ধর্মীয় ভাবনাকে সাহিত্যরূপে উপস্থাপন করতে ভালোবাসেন। তার লেখায় থাকে গভীর চিন্তা, সাহিত্যিক শৈলী এবং সমাজ সচেতনতামূলক বার্তা। ‘নারীর অলংকার’ প্রবন্ধেও তার ভাবনার পরিণত ও চিন্তাশীল প্রকাশ লক্ষ্য করা যায়।