সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৪৭ অপরাহ্ন
Headline
কুমিল্লায় আওয়ামী লীগের ৬ আইনজীবী কারাগারে শ্রীপুর থানার ওসির ব্যবসাকে কেন্দ্র করে মোটোফোনে ঘুষ চাওয়ার অডিও ভাইরাল ছাত্রদল নেতা পারভেজ হত্যার প্রতিবাদে মাটিরাঙ্গায় মানববন্ধন কুমিল্লা নগরীতে ঝটিকা মিছিল, আটক ৮ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী কালিয়াকৈরে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল ও পথসভা অনুষ্ঠিত লালমনিরহাটে সাংবাদিক শাহিনুর ইসলাম শাহিন এর নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত। রাণীশংকৈলে আওয়ামী লীগের পাঁচ নেতা কর্মী বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার কুমিল্লায় র‍্যাবের অভিযানে ১৯৩ বোতল ফেনসিডিল ও ৩ কেজি গাঁজা’সহ আটক-১ কুমিল্লায় র‍্যাবের অভিযানে ১৯৩ বোতল ফেনসিডিল ও ৩ কেজি গাঁজা’সহ আটক-১
Headline
Wellcome to our website...
পদ্মা সেতু প্রকল্পের মালামাল বিক্রি তথ্য চাওয়ায় সাংবাদিকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা
/ ২৩ Time View
Update : বুধবার, ১৯ মার্চ, ২০২৫, ৬:০৩ অপরাহ্ন

পদ্মা সেতু প্রকল্পের মালামাল বিক্রি তথ্য চাওয়ায় সাংবাদিকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা

মাহমুদুর রহমান জুয়েল
স্টাফ রিপোর্টার

পদ্মা সেতু প্রকল্পের নামে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা বিভিন্ন যন্ত্রাংশ বিক্রয় করার বিষয়ে তথ্য চাওয়ায় শরীয়তপুরের দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে ঐ মামলায় স্থানীয় আরো ৪ জনকে আসামী করা হয়েছে

মামলার আসামীরা হলেন জাজিরা উপজেলার নাওডোবা ইউনিয়নের তপু ঢালী, সুমন, জাহিদ, বাদশা শেখ ও জাজিরা উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক সংবাদ শরীয়তপুর প্রতিনিধি মো. পলাশ খান এবং জাজিরা উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক আজকের দর্পণ শরীয়তপুর প্রতিনিধি শাওন মিয়া

অনুসন্ধানে জানা যায় পদ্মা সেতু প্রকল্পে কাজ করা চীনা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেড শুল্কমুক্ত সুবিধায় তাদের চাহিদা অনুযায়ী ২০১৫ সাল হতে পরবর্তি ৯ বছরে প্রায় ১০৩ মিলিয়ন ডলার বা এক হাজার ১৪৫ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি, যানবাহন ও আনুষঙ্গিক পণ্য আমদানি করেছে। শর্ত ছিল, এসব পণ্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অনুমতি ছাড়া বাংলাদেশের কারো কাছে বিক্রি বা হস্তান্তর করা যাবে না। পদ্মাসেতু প্রকল্পের রিভার ট্রেনিং ওয়ার্কস এর আওতায় ২০১৫ সাল থেকে মোট এক হাজার ৮১০টি চালানে পণ্য দেশে এসেছে তার মধ্যে এক হাজার ৪৭১টি চালান এসেছে প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব ব্যবহারের জন্য এবং বাকি ৩৩৯টি চালান এসেছে পুনঃরপ্তানির শর্তে

আরও জানা যায় সিনোহাইড্রো গত ১১ বছরে একটি পণ্যও ফেরত নেয়নি প্রতিষ্ঠানটি আমদানি বিধি লঙ্ঘন করে বাংলাদেশে এসব নির্মাণ সামগ্রী ও ভারী যন্ত্রপাতি বিক্রি করেছেন গত ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত স্থানীয় বাজারে অনুমতি পাওয়ার আগ পর্যন্ত অবৈধভাবে বিক্রির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি কর ও আমদানি শুল্ক ফাঁকি দিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করলেও সরকারি খাতায় এর কোনো তথ্য নেই। আমদানি করা এসব পণ্যের শুল্ক হার ছিলো আমদানি মূল্যের ২৫ থেকে ৬৪ শতাংশ পর্যন্ত

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায় সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেড শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানিকৃত মালামাল বিক্রয়ের অনুমোদন পাওয়ার আগে বেশ কয়েকবার তাদের জাজিরা ইয়ার্ড হতে গোপনে মালামাল বিক্রয়ের চেষ্টা করেছিলো পরে তা সেতু কর্তৃপক্ষ জানতে পেরে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানাকে অবগত করায় সর্বশেষ গত ২০ ফেব্রুয়ারি একটি ট্রাক আটক করে স্থানীয়রা থানায় নিয়ে যায় পরে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকার্তা সেটি আদালতকে অবগত না করে সিনোহাইড্রো কর্পোরেশনের জাজিরা ইয়ার্ডে ফিরিয়ে দেয়

ভুক্তভোগী সাংবাদিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায় গত ২০ ফেব্রুয়ারি সকালে জাজিরা পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকায় সিনোহাইড্রো করপোরেশনের ইয়ার্ড হতে ভারী ট্রাক ভর্তি মালামাল নিয়ে বের হলে স্থানীয়রা তা আটক করে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায় নিয়ে যায় খবর পেয়ে সেখানে স্থানীয় সংবাদকর্মীরা সেখানে গিয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকার্তা(ওসি) নকিব আকরাম হোসেন জানায়, স্থানীয়রা পদ্মা সেতু প্রকল্পে ব্যবহৃত কিছু মালামাল আটক করে থানায় নিয়ে এসেছে পরে সিনোহাইড্রো কোম্পানির পক্ষ থেকে তাকে একটি নথি প্রদান করা হয়েছে যাতে ওই মালামাল বিক্রয়ের বিষয়ে অনুমতি দেয়া হয়েছে পরে সংবাদকর্মীরা ঐ নথিপত্র সংগ্রহ করে থানা থেকে চলে যান

পরবর্তিতে জানা যায় আটককৃত ঐ ট্রাকভর্তি মালামাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নকিব আকরাম হোসেন সিনোহাইড্রো করপোরেশন কোম্পানির ইয়ার্ডে ফেরত পাঠিয়েদেন

এদিকে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ওসির কাছে প্রদানকৃত নথিপত্র পর্যালোচনা ও সেতু কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে সংবাদকর্মীরা জানতে পারে নথিগুলো পদ্মা সেতু প্রকল্পে ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি বিক্রয়ের অনুমতি নয় পরে ওসি নকিব আকরাম হোসেনের কাছে ঐ মালামাল জব্দ করে আদালতকে অবগত না করে ফেরত দেয়ার কারন জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি

এরপর গত ১৫ মার্চ সন্ধায় আবারও জাজিরার পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকায় সিনোহাইড্রো করপোরেশনের ইয়ার্ড হতে M/S IT Fusion নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করা সেনাবাহিনীর লোগো সংবলিত সাইনবোর্ড ব্যবহার করে একটি ট্রাক ভর্তি মালামাল আটক করে স্থানীয়রা পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায় নিয়ে যায় এবং সংবাদিকদের জানায়। খবর পেয়ে জাজিরা উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি পলাশ খান বিষয়টি জানতে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকার্তা নকিব আকরাম হোসেনের মুঠোফোনে কল করলে তিনি ফোন ধরেননি। পরে সংবাদদাতা এক স্থানীয় ব্যক্তির সহযোগীতায় আটককৃত ট্রাকের চালকের সাথে মুঠোফোনে কথা বলে জানার চেষ্টা করেন ওই ট্রাকটি কে বা কারা ভাড়া করেছেন। চালক জানায় তাকে মেসার্স ত্বলহা ট্রাক ট্রান্সপোর্ট এন্ড কমিশন এজেন্সি নামে একটি ট্রান্সপোর্ট কোম্পানি ভাড়া করেছে। পরে চালকের তথ্যানুযায়ী মুঠোফোনে ঐ ট্রান্সপোর্ট কোম্পানির পরিচালক মুহা. মফিজুল মীরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সফিকুল নামে একজন আমাদের থেকে ট্রাক ভাড়া নিয়েছেন। পরে সফিকুল নামে ঐ ব্যক্তির মুঠোফোন নম্বর নিয়ে তার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছু জানিনা এবং ফোনের লাইন কেটে দেন। এর কিছুক্ষণ পরেই অবসরপ্রাপ্ত কর্ণেল পরিচয়ে হাসানুজ্জামান নামে এক ব্যক্তি সাংবাদিক পলাশ খানকে ফোন দিয়ে উত্তেজিত হয়ে বিভিন্নভাবে দোষারোপ করতে থাকে। তখন সাংবাদিক পলাশ খান নিউজের জন্য তথ্য সংগ্রহের বিষয়টি বুঝিয়ে বললে হাসানুজ্জামান তাকে মালামাল ক্রয় সংক্রান্ত নথিপত্র প্রদান করেন এবং বলেন, তিনি সম্পূর্ণ বৈধভাবে তার কোম্পানি M/S IT Fusion এর মাধ্যমে সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেডের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে মালামাল ক্রয় করেছেন।
তার ক্রয়কৃত মালামাল বহনের ট্রাকের সামনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লোগো ব্যবহার করে সেনাবাহিনীর জরুরী কাজে নিয়োজিত সাইনবোর্ড লাগানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তার সম্পূর্ণ দায় ট্রাক চালকের উপরে দিয়ে বলেন, এ সম্পর্কে আমি কিছু জানিনা। সে বিষয়ে আপনি ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করুন। এর পরেরদিন ১৬ মার্চ জানা যায়, দুই সাংবাদিকসহ ৬ জনের নামে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায় এজাহার দায়ের করা হয়েছে এবং ঐদিনই বিকেলে ঐ এজাহারের ভিত্তিতে মামলা রুজু করা হয়। যার নম্বর- ১৩। মামলায় বাদী হয়েছেন হৃদয় খান নামে একজন ট্রাক চালক।

এবিষয়ে জাজিরা উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি পলাশ খান বলেন, ১৫ মার্চ সর্বশেষ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্ণেল পরিচয়দাতা হাসানুজ্জামানের সাথে মোবাইলে কথা বলে তথ্য নেয়ার কিছুক্ষণ পরে জাজিরা এলাকায় কর্মরত ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্সের (ডিজিএফআই) সদস্য এনামুল সাহেব আমাকে ফোন করে বললেন, নিউজটি কইরেন না। কাল ওনারা (হাসানুজ্জামান) আসবেন তারপর তার কথা শুনে ও কাজগজপত্র দেখে যা করার কইরেন। নিউজ না করতে বলার বিষয়টি জানতে আমার প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শাওন মিয়াকে ডিজিএফআইয়ের সদস্য এনামুল সাহেবের সাথে কথা বলতে বলি। এরপরের দিনই জানতে পারি আমাদের দুজনের নামে মামলা করা হয়েছে। এখানে গভীর ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। আমি এর সঠিক তদন্তের চাই।

আরেক ভুক্তভোগী সাংবাদিক শাওন মিয়া বলেন, ঘটনার দিন আমি শরীয়তপুর সদরে আমার শশুরের চিকিৎসার কাজে হযরত শাহজালাল হসপিটালে ছিলাম। আমি জানিনা আমার নামে কেন এমন অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এখানে নিশ্চই কোন ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। আমি এর সঠিক তদন্তের দাবী জানাই।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় মামলার বাদী হৃদয় খানের সঙ্গে। তিনি বলেন, মামলায় যা লেখা আছে সব সত্যি। আমাকে ওরা মারধর করছে।

এবিষয়ে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) নকিব আকরাম হোসেন বলেন, সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে চাপে পরে আমার মামলা রুজু করতে হয়েছে। আমার কিছু করার ছিলনা।

বিষয়টি নিয়ে জেলা পুলিশ সুপার নজরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে মামলা রুজু হয়েছে। তদন্তের ক্ষেত্রে আমরা সঠিক ভাবে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিব।

তিনি আরোও বলেন, সাংবাদিকদের মামলায় জড়িত হওয়ার ব্যপারে যদি আমাদের পদ্মা থানার ওসির অসৎ উদ্দেশ্য থাকে তাহলে সেটা আমরা তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিব।

আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
Our Like Page