বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান ধর্ষণের ঘটনা বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও সামাজিক অবক্ষয়- সাংবাদিক শাহাদুর রহমান
শাহাদুর রহমান, মানিকগঞ্জঃ
বাংলাদেশে ধর্ষণ এখন শুধু একটি আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত সমস্যা নয়; এটি একটি ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন দেশের কোনো না কোনো স্থানে ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে, যার বেশিরভাগই বিচারহীনতার গহ্বরে হারিয়ে যায়।
সর্বশেষ মাগুরার ঘটনা আমাদের হৃদয়কে নাড়িয়ে দিয়েছে। মাত্র আট বছর বয়সী শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয়েছে, যা আমাদের সমাজের বিকৃত মানসিকতার নির্মম বহিঃপ্রকাশ। আছিয়া নামের এই শিশুটি, যে এখনো ভালো-মন্দ বুঝতে শেখেনি, তাকেও আমরা নিরাপদ রাখতে ব্যর্থ হয়েছি। এ ঘটনা একা নয়, এর আগেও আমরা কুমিল্লা, সুনামগঞ্জ, নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় একই ধরনের লোমহর্ষক ঘটনা দেখেছি।
বিচারহীনতার সংস্কৃতি এবং প্রশাসনের ব্যর্থতা
বাংলাদেশে ধর্ষণের ঘটনায় বিচারহীনতার হার আশঙ্কাজনকভাবে বেশি। আইন থাকলেও কার্যকর প্রয়োগের অভাব ধর্ষকদের প্রশ্রয় দিচ্ছে। ধর্ষণের পর মামলা হলেও দীর্ঘসূত্রিতা, সাক্ষীর অভাব, রাজনৈতিক প্রভাব এবং পুলিশের গাফিলতির কারণে বেশিরভাগ মামলাই ন্যায়বিচার পায় না।
২০২৩ সালে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশে ধর্ষণের মামলার ৯০% এর বেশি ভিকটিম ন্যায়বিচার পায় না। যার ফলে অপরাধীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে।
সামাজিক অবক্ষয় ও নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন
আমাদের সমাজে নারীদের এখনো ভোগ্যপণ্য হিসেবে দেখা হয়। পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এমনকি গণমাধ্যমেও নারীদের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ ঘটে। পর্নোগ্রাফির সহজলভ্যতা, সামাজিক অবক্ষয়, মাদকাসক্তি এবং সুষ্ঠু পারিবারিক মূল্যবোধের অভাব যৌন সহিংসতা বাড়িয়ে তুলছে।
সমাধান কী?
১. দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা: ধর্ষণের ঘটনার জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে ৩০ দিনের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করতে হবে।
2. সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি: পরিবার থেকে শিক্ষা দিতে হবে, যেন ছেলেরা নারীদের সম্মান করতে শেখে।
৩. নারীদের আত্মরক্ষা প্রশিক্ষণ: প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মেয়েদের আত্মরক্ষার জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা দরকার।
৪. সাইবার অপরাধ রোধ: পর্নোগ্রাফি ও নারীদের প্রতি অনলাইন হয়রানি বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
আমরা আর কতদিন আমাদের শিশু, কিশোরী ও নারীদের প্রতি এমন নৃশংসতা মেনে নেব? ধর্ষণ প্রতিরোধে এখনই রাষ্ট্রের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত, নইলে ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে।
সম্পাদক: বিপ্লব কুমার দাস,প্রকাশক:আবছার উদ্দিন