ব্রাহ্মণপাড়ায় বিদ্যালয়ের পাশে ময়লার ভাগাড়, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা
মোঃ শরিফ খান আকাশ।।
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা সদরের ব্রাহ্মণপাড়া আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশেই ময়লার ভাগাড়। দীর্ঘদিন থেকে জমতে থাকা এসব ময়লা-আবর্জনার স্তূপ থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এতে মশা মাছির উপদ্রব বাড়ছে, দূষিত হচ্ছে বিদ্যালয়সহ আশপাশের পরিবেশ। যার ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে বিদ্যালয়ে পাঠ নিতে আসা কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলা সদরের ব্রাহ্মণপাড়া আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পশ্চিম-দক্ষিণ পাশে দীর্ঘদিন থেকে ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে স্থানটি ময়লায় ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। ময়লা-আবর্জনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অনেকটা জায়গাজুড়ে। দীর্ঘদিন ধরে ময়লা-আবর্জনা জমতে থাকার কারণে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে বিদ্যালয়সহ আশপাশের এলাকায়। আশপাশের বাসাবাড়ির ও অদূরের বাজারের উচ্ছিষ্ট ফেলার কারণেই এই ভাগাড়ের সৃষ্টি হয়েছে। এসব ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধ সহ্য করেই কোমলমতি শিক্ষার্থীরা পাঠ নিতে হচ্ছে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে শিক্ষকরাও নিরুপায় হয়ে পাঠ দিচ্ছেন শিক্ষার্থীদের। যার ফলে কোমলমতি শিক্ষার্থীরাসহ শিক্ষক শিক্ষিকাদেরও স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্ভাবনা রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মামুনুর রশীদ বলেন, স্কুলটি বাজারের কাছাকাছি হওয়ায় বাজারের ময়লাগুলো এখানে ফেলছেন অনেকেই। এতে স্কুলের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। ছোট ছোট বাচ্চারা নানা অসুখ-বিসুখে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। স্কুলের এই স্থানটি ময়লা-আবর্জনা মুক্ত রাখা উচিৎ। আমরা নিজেরা সচেতন হলে স্কুলের পাশে এ ধরনের ময়লার ভাগাড় সৃষ্টি হতো না।
আনিসুর রহমান নামে এক অভিভাবক বলেন, ব্রাহ্মণপাড়া আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশপাশের বাসাবাড়ির ময়লা ও কাছাকাছি বাজার থাকায় বাজারের ময়লাগুলো কিছু বিবেকহীন মানুষ স্কুলের পাশে ফেলছে। টিফিনের সময় অন্যান্য স্কুলের বাচ্চারা খেলাধুলা করলেও এ স্কুলে ময়লার দুর্গন্ধের কারণে বাচ্চারা প্রানখুলে খেলাধুলা করতে পারছে না। এতে আমাদের বাচ্চারা যেকোনো সময় অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। স্কুলের আশপাশ পরিষ্কার রাখা অত্যন্ত জরুরি। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, আশপাশের বাড়ির ও বাজারের একাংশের ময়লা এখানে ফেলা হচ্ছে। এ নিয়ে আমরা বহুবার বাধা দিয়েছি। আমাদের বাধার কারণে এখন আর দিনের বেলা ময়লা না ফেলে রাতের বেলা ময়লা ফেলছে। এসব ময়লা থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। তবে আমাদের বিদ্যালয়ের ১৩০ ফুট খোলা জায়গায় সীমানা প্রাচীরের জন্য আবেদন করা হয়েছে। আশা করছি সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়ে গেলে এ সমস্যা থাকবে না।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দা হালিমা পারভীন বলেন, বিদ্যালয়ের পাশে ময়লা ফেলা নিয়ে ইতোমধ্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহোদয়কে অবহিত করা হয়েছে। আমরা আশপাশের বাসাবাড়িতে ও বাজারের ব্যবসায়ীদেরও নোটিশ করেছি। এছাড়াও বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর নির্মাণের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চাহিদা দেওয়া হয়েছে। সীমানা প্রাচীর নির্মিত হয়ে গেলে এ সমস্যার অবসান হবে। সীমানা প্রাচীর বরাদ্দ হওয়ার আগে ওই স্থানে টিন দিয়ে বেড়া তৈরি করার পরিকল্পনা আছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু হাসনাত মো. মহিউদ্দিন মুবিন বলেন, ময়লা আবর্জনা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এতে বায়ুদূষণের মাধ্যমে পরিবেশের ক্ষতি সাধন হয়ে থাকে। যার ফলে মানবদেহে জন্ডিস, টাইফয়েড ও ডায়রিয়াসহ নানা রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকে। বিশেষ করে কোমলমতি শিশুদের ক্ষেত্রে এর প্রভাব বেশি প্রতিফলিত হতে পারে। এছাড়া ময়লা আবর্জনা পচে দুর্গন্ধ ছড়ালে অনেকেরই বমিভাব, পেট ব্যথা, মাথাব্যথাসহ নানা উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এতে পরিবেশের ভারসাম্যেরও ক্ষতি সাধন হয়।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও ) মো. ছামিউল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়ের পাশে ময়লার বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে ইতোমধ্যে আলোচনা করা হয়েছে। ময়লা-আবর্জনা অপসারণ করে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলার পরিকল্পনা করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যেন স্বাস্থ্যকর পরিবেশে পাঠ নিতে পারে সেলক্ষ্যে শিগগিরই বিদ্যালয়ের পরিবেশ দূষণমুক্ত করা হবে।
ক্যাপশন: ব্রাহ্মণপাড়া আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে জমানো ময়লার স্তূপ।