

রেগুলেটর ধস
নদীভাঙন রোধে কাফনের কাপড় পরে মানববন্ধন
মোঃ সামছু উদ্দিন লিটন, নোয়াখালী রিপোর্টার
নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নদীভাঙন রোধে কাপনের কাপড় পরে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী।
কোম্পানিগঞ্জ উপজেলা যুবদল নেতা হাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীমের সভাপতিত্বে ও উপজেলা বিএনপির সদস্য মোঃ আলমগীর মিয়ার সঞ্চালনায় মানববন্ধনে অংশ নিয়ে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সদস্য ও ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যান মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বাহিনীর অব্যাহত বালু উত্তোলনের ফলে ২৬ আগস্ট ছোট ফেনী নদীর ওপর নির্মিত মুছাপুর ২৩ ভেন্ট রেগুলেটর ভেঙে যায়। এতে লোনা পানি ঢুকে এ অঞ্চলের এক লাখ ৩০ হাজার হেক্টর জমির ফসল ফলানো যাচ্ছে না। আশপাশের শত শত বাড়ি-ঘর, ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। আমি বিএনপির হাই কমান্ডের কাছে অনুরোধ করবো, আমাদের দলের যারা এ বালু সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে জরুরি ব্যবস্থা নিন।
ফাতেমা বেগম নামে এক ভুক্তভোগী বলেন, গত ১৪ বছরে আমার বাড়ি চারবার ভেঙেছে। আমার আর কিছুই নাই। সামনে বর্ষা মৌসুমে নদী পাড়ের আর কেউ বসবাস করতে পারবে না। আমরাতো বাস্তুহারা হয়ে গেছি। আমাদের পরে যেসব বাড়ি আছে তারা খুবই অসহায়। তাদের দিকে সরকার যাতে একটু দয়াবান হয়। নদী শাসন করে এখানে অচিরেই একটি রেগুলেটর স্থাপনে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সহায়তা কামনা করছি।
কাফনের কাপড় পরে সাহাব উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি বলেন, বাড়িঘর ফসলি জমি হারিয়ে আমি কাপনের কাপড় পরে ফেলেছি। আমার বেঁচে থাকার আর সাধ নেই। সরকার যদি আমাদের দিকে নজর না দেয় পরিবারসহ আমরা আত্মাহুতি দেব।
মুছাপুর ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সভাপতি হাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম বলেন, রেগুলেটর ধ্বসে যাওয়ার পর গত ৮ মাসে নোয়াখালীর মুছাপুর, চরহাজারী, চরপার্বতী ও ফেনীর সোনাগাজীর চরদরবেশ ইউনিয়নের অন্তত ৫০০ বাড়ি, মক্তব, মসজিদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ শত শত একর ফসলি জমি, রাস্তাঘাট নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আমরা এ অঞ্চলের লোকজন চরম অসহায় এবং মানবেতর জীবন যাপন করছি। অনেকে বাড়ি হারিয়ে পরিবার নিয়ে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে। আমরা এর প্রতিকার চাই।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সাবেক কৃষি কর্মকর্তা পুষ্পেন্দু বড়ুয়া বলেন, রেগুলেটরটি বঙ্গোপসাগরের সন্দীপ চ্যানেলের কাছাকাছি ছোট ফেনী নদী হয়ে বড় ডাকাতিয়া নদীর মুখে অবস্থিত। কুমিল্লা জেলার ছয়টি উপজেলা- কুমিল্লা সদর, সদর দক্ষিণ, বরুড়া, লাকসাম, নাঙ্গলকোট, চৌদ্দগ্রাম; ফেনী জেলার ফেনী সদর উপজেলা, দাগনভূঞা, সোনাগাজী ও নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা- এই দশটি উপজেলার বৃষ্টির পানি এই মুছাপুর রেগুলেটর হয়েই যেত। আবার বোরো মৌসুমের সেচ কার্যক্রম এ মুছাপুর ক্লোজারের জমানো মিষ্টি পানির মাধ্যমে সম্পন্ন হতো। এ তিন জেলার দশটি উপজেলার আনুমানিক এক লাখ ৩০ হাজার হেক্টর জমি এ রেগুলেটরের ক্যাচমেন্ট এরিয়াতে পড়ে। এটা ভাঙার ফলে রাষ্ট্রের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেছে।
মানববন্ধনে আরো বক্তব্য রাখেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক আনিছুল হক, সদস্য আফতাব আহমেদ বাচ্চু, একরামুল হক মিলন মেম্বার, মাস্টার আবু নাছের, ফেনী জেলা কৃষক দলের সেক্রেটারি খোকন চেয়ারম্যান, সোনাগাজী উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম চেয়ারম্যান প্রমুখ।