শ্রীপুর থানার ওসির ব্যবসাকে কেন্দ্র করে মোটোফোনে ঘুষ চাওয়ার অডিও ভাইরাল
স্টাফ রির্পোটার:
আলমগীর হোসাইন:
গাজীপুরের শ্রীপুরে ঝুট ব্যবসায়ী সহযোগিতার নামে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসির অনৈতিক সুবিধা নেয়ার একটি অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে।
গতকাল ২০ এপ্রিল রবিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে অডিওটি। এতে স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. সেলিম মিয়া ও শ্রীপুর থানার ওসির কথোপকথন শুনাযায়। ৬ মিনিট ৫৬ সেকেন্ডের অডিওতে কয়েক দফা অনৈতিক সুবিধার কথা উঠে এসেছে। উঠে এসেছে ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, আসামি না গ্রেপ্তারের শর্তে মোটা অংকের ঘুষ দাবি। কথোপকথনটি যা বলা হয়েছে, ওসি তুমার হাত দিয়ে, আমি আমিনুলকে বলে দিচ্ছি তুই আমাকে ১ লাখ ৩০ দে। অপরপ্রান্ত থেকে এক ঝুট ব্যবসায়ী পুরুষ কণ্ঠে বলে স্যার আমার হাত দিয়ে। ওসি বলেন, তুমি এসব বুঝবা না। ব্যবসায়ী হায় হায় স্যার এই কথা আপনি বলছেন। তুমি এসব বুঝবা না, সে সব ভেঙে খাবে। ব্যবসায়ী তাহলে এখন কি করবো স্যার। তাহলে কি তাদের দায়ী করাবো। ওসি বলেন, ওঁদের দিয়ে করাও, তুমি পিছনে থাকো। ব্যবসায়ী জানতে চায় এরপর যদি ওঁরা গাড়ির সামনে দাঁড়াই তাহলে কি করবো। আপনি কি ব্যাকাব দিবেন? ওসি বলেন সামনে থাকবে না। মুন্না, তোর সাথে কি মুন্নার সম্পর্ক আছে? পুরুষ কণ্ঠে উত্তর দেন সে তো জেলা সেচ্ছাসেবক দলের। ওসি বলেন আচ্ছা এই বিষয়টি আমি দেখছি। এরপর ব্যবসায়ী জানতে চান শেষ পর্যন্ত কি আমিনুলরা টেকেল দিতে পারবো ওঁদের নামে ব্যবসা দিলে? ওসি বলেন, আমি আগে দেখি, কয়েকদিন দেখি। ব্যবসায়ী তখন বলেন, শনিবার তো বিস্কুট বের হবে এক গাড়ি। ওসি বলেন বিস্কুট বের হবে সেটা তো আরেক জামেলা। মুন্না তো এখন বিস্কুট চাচ্ছে না। স্পিনিং চাচ্ছে। ব্যবসায়ী বলেন, যদি বিএনপিরা করে তাহলে তো চাইতে পারবে না। আমিনুল তো থানা ছাত্রদলের সেক্রেটারি। আমিনুল আর তার বাপের নামে দিবো স্টাম্প কইরা। গোপনে মালিকানা থাকবো আমার নানা। এমডি স্যারকে বইলা দিবো আপাতত ভাইস্তা আর ছোটভাইকে দিয়ে ব্যবসা করাইতাছি। আর তলে তলে আমি সব হেন্ডেল কইরা দিবো। ওসি বলেন হাঁ এটাই ভালো। এটা আমিও বলে দিবো। মুন্নার কাছে গেলে সব আউট হয়ে যাবে। ব্যবসায়ী বলেন তাহলে আপনি কাজ কইরেন। মুন্নার কাছে গেলে টাকার এমাউন্ট চাইবো অনেক। যে টাকা এখানে তো এতবেশী টাকা দেয়া সম্ভব না। ওসি বলেন আমি আমিনুলকে বলে দিবোনে। ব্যবসায়ী বলেন, আমিনুলকে আগেই বলতে হবে না। আগে আমরা বাড়িতে বসি। ওসি বলেন বস। ব্যবসায়ী আমিনুলকে ফোন দিয়ে এনে নানাকে নিয়ে বসি। গোপনে বসি যদি আমাদের লেভেলে হয় তাহলে ওগরে দিয়ে দিবো আর যদি না হয় তাহলে ব্যবসা মোর্শেদকে দিয়ে দিবো। ওসি মোর্শেদ চেয়ারম্যানকে? ব্যবসায়ী আমাদের কথার বাইরে গেলে মোর্শেদ চেয়ারম্যানকে দিয়ে দিবো। খামো না কাউকে খাইতেও দিবো না। ওসি দেখা যাক আমি কথা বলছি। ব্যবসায়ী এখন কিছু বলতে হবে না স্যার। ওসি তুমার নানা আমাকে দেখে না কেন? ৫ হাজার ১০ হাজার এটা কোন টাকা? এই টাকা দিয়ে কি হয়। আমি এত চাপ নিচ্ছি। তুমার নানাকে বল আমাকে লাখ পাঁচেক টাকা দিতে। ব্যবসায়ী বাড়ির কাম করতে যাইয়া অবস্থা খুবই খারাপ। তখন ওসি রেগে গিয়ে বলে এসব কথা বলো না। আমি যেটা বলি সেটা করো। না হলে জামেল হবে। ব্যবসায়ী আরেকটা কথা বলি ঐযে শাহাবুদ্দিন মামুর কথা যে বলছিলাম আপনাকে শৈলাট রোডে বাড়ি শাহাবুদ্দিন মামু। ওর বাসায় আমিনুল আপনাকে একবার পাঠাইছে। ওর কথা আপনাকে বলছিলাম। আপনি বলছিলেন নিয়ে আইসো। ওরে নিয়ে আসলে ৫০ হাজার টাকা দিবো। ওসি দূর ৫০ হাজার টাকা ওকে বল লাখ খানেক টাকা দিতো। ব্যবসায়ী তাহলে আমি ফোন ধরিয়ে দেই আপনি একটু কথা বলবেন? ওসি কোন কথা হবে না ওকে নিয়ে আসো। তাহলে হোয়াটসঅ্যাপ কথা বলবেন? ওসি কোন কথা না তুমি আমাকে চিন না, এত সমস্যা কি, সমস্যা করলে ধরে নিয়ে আসবো। ব্যবসায়ী তাহলে আমি ওর কাছে গিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ কল দেই এক মিনিট কথা বলবেন। ওসি যাও আজকেই নিয়ে আসবা। বয়বসায়ী নাহলে সে বিশ্বাস করবে না। আপনি বলবেন আগামীকাল নিয়ে আসেন। ওসি সে না তুমি নিয়ে আসবা। ব্যবসায়ী তাহলে বিশ্বাস করবে। আপনি শুধু বলবেন এক নিয়ে আসেন। আর স্যার আমিনুলরে এখন কিছু বলার দরকার নেই। আমরা বইসা এটা ই করতেছি স্যার। ওসি তুমার নানারে বল ৫ ব্যবস্থা করে দিতে। ব্যবসায়ী স্যার বিশ্বাস করবেন আমরা যে ব্যবসা করি, এখন সেই পরিমাণ টাকা নাই স্যার। ওসি তুমাদের ব্যবসা লাগে না। ব্যবসায়ী গাড়ি মাইর খাইয়া পইড়া রইছে। এমাসটা যাক, আমি দুই লাখ দিবো। ওসি এত কথা বল কেন ওসি বলছে করে দিও। ওসি বলছে করে দিও। তুমি তো আমাকে গেঞ্জি দিলানা। ব্যবসায়ী ফুলহাতা আচ্ছা ঢাকা থেকে নিয়ে আসবো।
ব্যবসায়ী সেলিম মিয়া বলেন, ওসি সাহেব আমাকে চাপ দিচ্ছে। আমাকে একটি লেখা দিছে এটা ফেসবুক এসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসে বলতে চাপ দিচ্ছে যে কথোপকথন মিথ্যা। এমন চাপ দিচ্ছে ওসি সাহেব। ওসি সাহেব আমাকে মাসোহারা দেয়ার জন্য চাপ দেন। আমি প্রতিমাসে ১ লাখ টাকা দেই। তবুও তিনি আরও চাপ দেন। ওসি আমাকে ছাত্রলীগের তকমা দিয়ে গ্রেপ্তারের জন্য চাপ দেন। অডিও প্রকাশ করার কারণে ওসি আমাকে প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছে। আমি বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় আছি।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি জয়নাল আবেদীন মণ্ডল বলেন, আমার কথা এডিট করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছে একটি চক্র।
সম্পাদক: বিপ্লব কুমার দাস,প্রকাশক:আবছার উদ্দিন