লন্ডনে ড. ইউনূসের সাথে দেখা করার অনুরোধ করে টিউলিপের চিঠি।
ভুল বোঝাবুঝির ঝামেলা দূর করতে লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে দেখা করার অনুরোধ করে চিঠি দিয়েছেন টিউলিপ সিদ্দিক। রোববার (৮ জুন) এক প্রতিবেদনে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এ তথ্য জানায়।
সিদ্দিকের খালা শেখ হাসিনা, যিনি ১৫ বছর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গত সপ্তাহে অনুপস্থিতিতে বিচার শুরু হয়েছে। টিউলিপ সিদ্দিককে তার খালার শাসনামলে অবৈধ সুবিধা নেয়ার অভিযোগ অভিযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন দাবি করেছে যে সিদ্দিক বা তার মা শেখ রেহানা ‘ক্ষমতার অপব্যবহার ও প্রভাব’ কাজে লাগিয়ে ৭,২০০ বর্গফুট জমি পেয়েছেন।
টিউলিপ সিদ্দিক এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, এগুলো ‘রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ ও ভিত্তিহীন। তার আইনজীবীরা জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে তাদের সাথে কোনো যোগাযোগ করেনি।
অসদাচরণের প্রমাণ না পেলেও, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের নতুন সরকারের জন্য এই ইস্যুটি বিভ্রান্তি তৈরি করায় টিউলিপ অর্থনৈতিক সচিব ও সিটি মন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান।
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে লেখা এক চিঠিতে টিউলিপ সিদ্দিক চলতি সপ্তাহে তার লন্ডন সফরে এই বিতর্ক নিয়ে আলোচনার সুযোগ চেয়েছেন। ড. ইউনূস যুক্তরাজ্য সফরে রাজা চার্লস ও কিয়ার স্টারমারের সাথে দেখা করবেন।
চিঠিতে সিদ্দিক লিখেছেন, ‘আমি আশা করি এই বৈঠক ঢাকার দুর্নীতি দমন কমিটির তৈরি করা ভুল বোঝাবুঝি দূর করতে সাহায্য করবে, যেখানে আমার খালা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে জড়িত কিছু প্রশ্নের জবাব দিতে হবে বলে দাবি করা হচ্ছে।’
তিনি চিঠিটে এও উল্লেখ করেন, ‘আমি একজন ব্রিটিশ নাগরিক, লন্ডনে জন্মগ্রহণকারী এবং গত এক দশক ধরে হ্যাম্পস্টিড ও হাইগেটের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছি। বাংলাদেশে আমার কোনো সম্পত্তি বা ব্যবসায়িক স্বার্থ নেই। দেশটি আমার হৃদয়ের কাছাকাছি, কিন্তু এটা সেই দেশ নয় যেখানে আমি জন্মগ্রহণ করেছি, বসবাস করি বা ক্যারিয়ার গড়েছি।’
সিদ্দিক অভিযোগ করেন, “দুর্নীতি দমন কমিশনকে আমি এ বিষয়ে স্পষ্ট করতে চেয়েছি, কিন্তু তারা আমার লন্ডনভিত্তিক আইনজীবীদের সাথে যোগাযোগ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে এবং ঢাকার একটি এলোমেলো ঠিকানায় চিঠি পাঠিয়ে যাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই কাল্পনিক তদন্তের প্রতিটি পদক্ষেপ মিডিয়াকে লিক করা হচ্ছে, কিন্তু আমার আইনি টিমের সাথে কোনো আলোচনা করা হয়নি।’
গত মাসে বাংলাদেশে সিদ্দিকের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির খবর প্রকাশিত হয়। তবে তিনি জানান, এমন কোনো পরোয়ানা বা আদালতের শুনানির কথা তার জানা নেই। যুক্তরাজ্য বাংলাদেশকে ২বি এক্সট্রাডিশন ক্যাটাগরিতে রাখায়, বাংলাদেশকে স্পষ্ট প্রমাণ দেখাতে হবে তাকে গ্রেফতারের আগে।
গত বছর মন্ত্রীদের নৈতিকতা উপদেষ্টার কাছে যুক্তরাজ্যে তার সম্পত্তি অর্জন নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে, জানুয়ারিতে তাকে নির্দোষ বলে ঘোষণা দেয়া হয়।
উল্লেখ্য, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস চার দিনের সরকারি সফরে যুক্তরাজ্যে যাচ্ছেন। সোমবার (৯ জুন) থেকে তার এই সফর শুরু হবে বলে জানা যায় । এই সফরে বাকিংহাম প্যালেসে ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে দেখা করবেন ড. ইউনূস। এ সময় তিনি রাজা চার্লসের হাত থেকে গ্রহণ করবেন ‘কিংস চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড।
সম্পাদক ও প্রকাশক:আবছার উদ্দিন