

রিপোর্টার মো:হাসিব ইসলাম
ইসলামী আইনে প্রকাশ্যে শাস্তির বিধান চালু করা জরুরি!!
বর্তমান সময়ে সোশ্যাল মিডিয়া এবং পত্রিকার পাতা খুললেই দেখা যাচ্ছে ধর্ষণের ঘটনা। সব থেকে বেশি দেখা যাচ্ছে ধর্ষণের শিকার হচ্ছে গর্ভবতী নারী ও ছোট শিশু।
তবে দেখা যাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই আওয়াজ তুলছেন ধর্ষকের গলা পর্যন্ত মাটি পুঁতে মাথায় পাথর মেরে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হোক। তাহলে অন্য কেউ ধর্ষণের কথা চিন্তাও করতে পারবে না।
অন্যান্য দেশে আইনি বিধান থাকলো বাংলাদেশে এমনটি আইন নেই।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন,
( ২০০০ সনের ৮ নং আইন )
ধর্ষণ, ধর্ষণজনিত কারণে মৃত্যু, ইত্যাদির শাস্তি
(১) যদি কোন পুরুষ কোন নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন, তাহা হইলে তিনি 1[মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে] দণ্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন
ব্যাখ্যা৷- যদি কোন পুরুষ বিবাহ বন্ধন ব্যতীত 2[ষোল বৎসরের] অধিক বয়সের কোন নারীর সহিত তাহার সম্মতি ব্যতিরেকে বা ভীতি প্রদর্শন বা প্রতারণামূলকভাবে তাহার সম্মতি আদায় করিয়া, অথবা 3[ষোল বৎসরের] কম বয়সের কোন নারীর সহিত তাহার সম্মতিসহ বা সম্মতি ব্যতিরেকে যৌন সঙ্গম করেন, তাহা হইলে তিনি উক্ত নারীকে ধর্ষণ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন।
(২) যদি কোন ব্যক্তি কর্তৃক ধর্ষণ বা উক্ত ধর্ষণ পরবর্তী তাহার অন্যবিধ কার্যকলাপের ফলে 4[ধর্ষণের শিকার] নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটে, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অন্যূন এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন।
(৩) যদি একাধিক ব্যক্তি দলবদ্ধভাবে কোন নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন এবং ধর্ষণের ফলে উক্ত নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটে বা তিনি আহত হন, তাহা হইলে ঐ দলের প্রত্যেক ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অন্যূন এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন।
(৪)যদি কোন ব্যক্তি কোন নারী বা শিশুকে-
(ক) ধর্ষণ করিয়া মৃত্যু ঘটানোর বা আহত করার চেষ্টা করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি 5[মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে] দণ্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন;
(খ) ধর্ষণের চেষ্টা করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি অনধিক দশ বৎসর কিন্তু অন্যূন পাঁচ বৎসর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন।
(৫) যদি পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন সময়ে কোন নারী 6[ধর্ষণের শিকার] হন, তাহা হইলে যাহাদের হেফাজতে থাকাকালীন উক্তরূপ ধর্ষণ সংঘটিত হইয়াছে, সেই ব্যক্তি বা ব্যক্তিগণ 7[ধর্ষণের শিকার] নারীর হেফাজতের জন্য সরাসরিভাবে 8[দায়িত্বপ্রাপ্ত] ছিলেন, তিনি বা তাহারা প্রত্যেকে, ভিন্নরূপ প্রমাণিত না হইলে, হেফাজতের ব্যর্থতার জন্য, অনধিক দশ বৎসর কিন্তু অন্যূন পাঁচ বৎসর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অন্যূন দশ হাজার টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন।
অন্যদিকে ইসলামে ব্যাভিচারী এবং ধর্ষণকারীকে জনসম্মুখে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। আর এর শাস্তি হলো ১০০ বেত্রাঘাত অথবা পাথর মেরে হত্যা করা। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘তাদের শাস্তি দিতে যেন তোমাদের মনে দয়ার উদ্রেক না হয় এবং মুসলমানদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে।’
কোরআন বা হাদিসে ধর্ষণকে ভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়নি। বরং বিবাহবহির্ভূত যে কোনো যৌন সম্পর্কই ইসলামে অপরাধ হিসেবে গণ্য। ফলে ব্যাভিচারী ও ধর্ষক উভয়ের জন্যই কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করেছে ইসলাম।
শিরক ও হত্যার পর ব্যাভিচার বা ধর্ষণ সুস্পষ্ট হারাম ও বড় ধরনের অপরাধ। এজন্য ইসলামে ব্যাভিচার ও ধর্ষণের কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। তবে এখানে শাস্তি ব্যক্তিভেদে একটু ভিন্ন। নিজের স্বামী/স্ত্রী থাকাবস্থায় যদি কেউ ব্যাভিচারী হয়, তাহলে তাকে প্রকাশ্যে পাথর মেরে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া ইসলামের বিধান। আর যদি ব্যাভিচারী (নারী-পুরুষ) অবিবাহিত হয়, তাহলে তাকে প্রকাশ্যে একশটি বেত্রাঘাত করা হবে।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘ব্যাভিচারিণী নারী, ব্যাভিচারী পুরুষ, তাদের প্রত্যেককে একশ করে বেত্রাঘাত কর। আল্লাহর বিধান কার্যকর করণে তাদের প্রতি যেন তোমাদের মনে দয়ার উদ্রেক না হয়, যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাক। মুসলমানদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে। ’ (সুরা নুর, আয়াত : ২)
হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘অবিবাহিত পুরুষ-নারীর ক্ষেত্রে শাস্তি একশ বেত্রাঘাত এবং এক বছরের জন্য দেশান্তর। আর বিবাহিত পুরুষ-নারীর ক্ষেত্রে একশ বেত্রাঘাত ও রজম (পাথর মেরে মৃত্যুদণ্ড)। ’ (সহিহ মুসলিম)
ইসলামে ধর্ষণের শাস্তির স্বরূপ
ধর্ষণের ক্ষেত্রে একপক্ষে ব্যাভিচার সংগঠিত হয়। আর অন্যপক্ষ হয় নির্যাতিত। তাই নির্যাতিতের কোনো শাস্তি নেই। কেবল অত্যাচারী ধর্ষকের শাস্তি হবে। ধর্ষণকারী একসঙ্গে দুটো অপরাধ সংঘঠিত করে। এক. ব্যাভিচার। দুই. অন্যের শারীরিক এবং সামাজিক মর্যাদার ক্ষতি। এক্ষেত্রে প্রথমটির জন্য পূর্বোক্ত ব্যভিচারের শাস্তি বরাদ্দ। আর যেহেতু একই সঙ্গে দ্বিতীয় আরেকটি অপরাধ সংঘটিত হলো এজন্য হয়তো রাসুল (সা.) ধর্ষণকারীকে হত্যার শাস্তি দিয়েছেন।
ধর্ষণ বা ব্যাভিচারকারীকে প্রকাশ্যে শাস্তি দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে যাতে মানুষ এই শাস্তি স্বচক্ষে দেখতে পায়। প্রকাশ্য শাস্তি দেখলে মানুষের মধ্যে ভয় ঢুকবে এবং এ ধরনের কাজ থেকে নিজেকে নিবৃত রাখতে সচেষ্ট থাকবে।
বাংলাদেশে সম্প্রতি বহু ধর্ষণের ঘটনা সংবাদ শিরোনাম হচ্ছে এবং কিছু কিছু ঘটনা ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। ধর্ষণ এখন সামাজিক ব্যাধিতে রূপান্তরিত হয়েছে। অনেকে মনে করছেন, এই সামাজিক ব্যাধি রোধ করতে ইসলামী আইনে প্রকাশ্যে শাস্তির বিধান চালু করা জরুরি।