রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৪৩ পূর্বাহ্ন
Headline
Wellcome to our website...
নাটোরের মহা রাণী ভবানী
/ ২১৫ Time View
Update : রবিবার, ২৬ মে, ২০২৪, ৮:২০ অপরাহ্ন

নাটোরের মহা রাণী ভবানী

বিপ্লব কুমার দাস। উপদেষ্টা ও নিজস্ব প্রতিবেদক বাংলাদেশ।

নাটোরের রাজরাণী রাণী ভবানী। রাণী ভবানীর জন্মস্থান বগুড়া জেলাধীন সাবেক দুপচাঁচিয়া থানা বর্তমান আদমদিঘী থানার অন্তর্গত ছাতিয়ান গ্রামে সনাতন পরিবারে তার জন্ম হয়েছিল ১৭১৬ সালে। তার বাবার নাম রাজা আত্মারাম চৌধুরী আর মায়ের নাম জয় দূর্গা। ১৭৩১ সালে ১৬ বছর বয়সে তার বিবাহ সম্পূন্ন হয় নাটোরের রাজ পরিবারে। নাটোর রাজ পরিবারের ২য় পুরুষ রাজা রাম কান্তের সহিত বিবাহ হয় এবং নাটোর চলে যান। ২৭ বছর বয়সে তার স্বামীর মৃত্যু হলে নাটোরের রাজ্যভার গ্রহন করেন। দক্ষ, ধর্মভীরু, দানশীল, ন্যায়পরায়ন জমিদার হিসাবে সে সময় বাংলায় বিশেষ ভাবে পরিচিতি লাভ করেন। যে কিনা পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজ উদ দৌলার পক্ষে সৈন্য পাঠিয়ে ছিলেন। তার মায়ের নামে জয় দূর্গা ছাতিয়ান গ্রামে মন্দির ছিল যা ভেঙ্গে মাদ্রাসা পরিচালিত হয়। বিয়ের আগে বাবার জমিদারী অঞ্চলে তিনি ৩৬০টা পুকুর খুঁড়িয়েছিলেন আর প্রত্যেকদিন আলাদা আলাদা পুকুরে স্নান করতেন। তার সন্তানদের মধ্যে (২ ছেলে, ১ মেয়ে ) শুধু তারাসুন্দরী জীবিত ছিলেন ।
একদিন শিকারের খোঁজে বেরিয়ে হঠাৎ অপরূপ এক সুন্দরীকে দেখতে পেলেন নাটোরের জমিদার রামকান্ত। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলেন মেয়েটিও সাধারণ কেউ নয়, তিনিও জমিদারের মেয়ে। তবে মেয়ের বাবা আত্মারাম চৌধুরীর জমিদারি নাটোরের থেকে অনেক ছোট। তাতে কি! তিনি ঠিক করলেন এই মেয়েকেই বিয়ে করবেন।
খবর পাঠানো হলো আত্মারাম চৌধুরীর মহলে। এত বড় জমিদারের কথায় কীভাবে ফিরিয়ে দেন তিনি! যেন সুবর্ণ সুযোগ বাড়ির দরজায় হাজির। কিন্তু মেয়ে অনেক বেশি জেদি। বিয়ে করতে তার শর্ত আছে, মোট তিনটা! এক, বিয়ের পর এক বছর তাকে বাবার বাড়িতে থাকতে দিতে হবে। দুই, এলাকার দরিদ্র মানুষকে দান করতে হবে জমি। আর তিন নম্বর শর্তটা ছিল সবচেয়ে বেশি অদ্ভুত। বাবার জমিদারি থেকে নাটোর পর্যন্ত রাস্তা বানিয়ে সেটা লাল শালু দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। সেটাতে হেঁটেই তিনি শ্বশুরবাড়ি যাবেন। রামকান্ত অবশ্য প্রত্যেকটা শর্তই মেনে নিয়েছিলেন। আর বিয়ের পর সেই মেয়ে হয়ে উঠলেন নাটোরের জমিদার বাড়ির বৌ, রানী ভবানী।
এমন গল্পই প্রচলিত রানী ভবানীর বিয়ে নিয়ে। তবে তার রানী হয়ে ওঠার পথটা অবশ্য অনেকটাই দীর্ঘ। তার এবং রামকান্তের তিন সন্তানের মধ্যে শুধু মেয়ে তারাসুন্দরী বাদে দুই ছেলে ছোটবেলায় মারা যান। এই তারাসুন্দরীকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা। পরে রামকৃষ্ণ নামের একটি ছেলেকে দত্তক নিয়েছিলেন রানী ভবানী। রামকান্তও অকালে চলে যান পৃথিবী ছেড়ে। তখন অবশ্য বাংলার নবাব ছিলেন সিরাজের দাদু আলিবর্দি খাঁ। নাটোরের জমিদার মারা যাওয়াতে নবাব আলিবর্দি নাটোরের জমিদারি পরিচালনার দায়িত্ব তুলে দেন রানি ভবানীর হাতে। এই রানি ভবানীর জমিদারি বিস্তৃত ছিল এখনকার রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, কুষ্টিয়া, যশোর, রংপুর, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম ছাড়িয়ে মালদা পর্যন্ত।

১৭৪৮ থেকে ১৮০২ সাল পর্যন্ত ৫৪ বছর ধরে এত বিশাল জমিদারি সামলিয়ে তিনি পরিচিত হলেন ‘অর্ধবঙ্গেশ্বরী’ নামে। জমিদারির তরফ দেখে নবাবকে রাজস্ব দিতেন বছরে প্রায় সত্তর লাখ টাকা। অর্থাৎ তখনকার দিনে এটা খুব বড় একটা অংক। হলওয়েল লিখে গেছেন, নবাব এবং ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি–দু’পক্ষই রানিকে বেশ সমীহ করে চলতেন। তবে, পলাশির যুদ্ধে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার পক্ষ নিয়ে লড়ার জন্য সৈন্যবাহিনী পাঠিয়েছিলেন রানী ভবানী।
এত কিছুর পরও প্রজাদের জন্য যা কিছু করে গেছেন তা স্মরণীয়। সুপেয় পানির জন্য অসংখ্য জলাশয়, পথিকদের জন্য পান্থশালার সঙ্গে সঙ্গে ‘ভবানী জাঙ্গাল’ নামের সেতু আর রাস্তাও তৈরি করিয়েছিলেন। হাওড়া থেকে কাশী পর্যন্ত রাস্তার ব্যবস্থা করেছিলেন। নাটোরের রাজ বাড়ী বা উত্তরা গণভবন হলো রাণী ভবানীর রাজবাড়ী।
১৮০২ সালে তিনি মারা যায় ইতিহাসের এ মহয়শী নারী।

বিপ্লব কুমার দাস

আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
Our Like Page