

নেত্রকোনার পূর্বধলায় জীবিত তিন ব্যক্তিকে মৃতের সার্টিফিকেট দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে
ডাঃএ,কে,আজাদ খান
বাংলাদেশ প্রতিনিধি
উপজেলার তিন ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের বিরোদ্ধে। ফলে তাদের নামের বরাদ্দকৃত বয়স্ক ও বিধবা ভাতাও বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ভোক্তভোগীদের দুইজন প্রতিকার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। ভুক্তভোগীদের দাবী সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, মেম্বার, সমাজ সেবা অফিসার মিলে তাদেরকে মৃত দেখিয়ে তাদের স্থলে অপরজনকে ভাতাভোগীর সুবিধা করে দিয়েছেন। অভিযুক্ত চেয়ারম্যানদের দাবী তাদের ভুলের কারনে এমনটি হয়েছে। ভুক্তভোগীরা হলেন, খলিশাউড় ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের গড়ুয়াকান্দা গ্রামের মৃত জহুর আলীর ছেলে মোঃ হযরত আলী (৭১)।
অপরজন হলেন হোগলা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের জামিরাকান্দা গ্রামের মৃত সুরুজ আরী ফকিরের স্ত্রী ও মৃত ইনতাজ মড়ল এর মেয়ে জহুরা খাতুন (৭৭) ও পূর্বধলা সদর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের উকুয়াকান্দা গ্রামের মৃত মামুদ আলীর মেয়ে খাদিজা আক্তার। হযরত আলী লিখিত অভিযোগে দাবী করেন তিনি দীর্ঘদিন যাবত বয়স্কভাতার আওতায় একজন উপকারভোগী হিসেবে বয়স্কভাতা পেতেন। গত দুই সেশনে তার মোবাইল একাউন্টে টাকা না আসায় বিষয়টি সমাজ সেবা অফিসে খোঁজ নেন। সেখানে সমাজ সেবা অফিসার জানান, খলিশাউড় ইউনিয়নের চেয়রাম্যান কমল কৃষ্ণ সরকারের দেয়া প্রত্যয়ন মোতাবেক তাকে মৃত দেখানো হয়েছে। পরবর্তীতে তার নামে বরাদ্দকৃত বয়স্কভাতা অন্য উপকারভোগীর নামে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এই ঘটনায় এর সাথে জড়িতদের বিরোদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী জানান তিনি।;অপর ভুক্তভোগী জহুরা খাতুনের অভিযোগ, তিনিও নিয়মিত বয়স্কভাতা ভোগী ছিলেন।
ভাতা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সমাজ সেবা অফিসে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তাকেও ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম আকন্দ খোকন এর স্বাক্ষরিত প্রত্যয়নে মৃত দেখিয়ে ভাতা বন্ধ করে দিয়ে জহুরা খাতুনের পরিবর্তে হালিমা খাতুন পিতা নূর মিয়া নাম অন্তর্ভুক্ত করে এক বছর যাবৎ ভাতা প্রদান করছে। হালিমা খাতুন নামে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এ বিষয়টি তিনি তার ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে অবহিত করেছেন। পূর্বধলা সদর ইউনিয়নের উকুয়াকান্দা গ্রামের মৃত মামুদ আলীর স্ত্রী খাদিজা আক্তার ২০১৯ সালে যাচাইবাছাই শেষে বিধবা ভাতার কার্ড পান। ইতোপূর্বে ব্যাংক ও পরে মোবাইল ব্যাংকের মাধ্যমে ২০২৩ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত টাকা উত্তোলন করেছেন।
এই ভাতার টাকায় তিনি নিজের ব্যয় বহন করতেন। গত বছরের মার্চ মাসের পর থেকে তিনি ভাতা পাচ্ছিলেন না। ঘটনাটি জানতে তিনি সমাজসেবা অফিসে খবর নিতে গেলে তাঁকে জানানো হয়, ‘আপনি তো মারা গেছেন’। তাই ভাতা বন্ধ হয়ে গেছে। এ বিষয়টি সম্পর্কে জানতে সদর ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্যকে ফোন করা হলে তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি। খলিশাউড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কমল কৃষ্ণ সরকার জানান, একই গ্রামের হযরত আলী নামে দুই ব্যক্তির এক ব্যক্তি মারা গেলে ভুলবসত জীবিত ব্যক্তিকে মৃত দেখানো হয়েছে। এই ভুল সংশোধনের জন্য ইতিমধ্যে সমাজ সেবা অফিসে কাগজ পাঠানো হয়েছে।
হোগলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম আকন্দ খোকন বলেন, আমার অজান্তে ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ভুলবসত এমনটি করেছে। তবে ভুল সংশোধনের জন্য ইতিমধ্যে আমি কাগজপত্র নিয়ে সমাজসেবা অফিসে যোগাযোগ করেছি এবং অতি দ্রুতই এই সমস্যার সমাধন হবে।;উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান জানান, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন চেয়ারম্যানগণ মৃত্যু সনদ ইস্যু করে প্রতিস্থাপনের সুপারিশ পাঠানোর প্রেক্ষিতে উক্ত ভাতাভুগী দুইজনকে মৃত দেখিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়। আমরা যেহেতু প্রকৃত বিষয়টি জানতে পেরেছি কয়েকদিনের মধ্যে সংশোধনের ব্যবস্থা দিব।;উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: খবিরুল আহসান জানান, জীবিত ব্যক্তিকে মৃতের সার্টিফিকেট দিয়ে তার ভাতা কেটে দিয়ে অন্য জনের নামে প্রতিস্থাপনের বিষয়ে একটি অভিযোগ আমি পেয়েছি। এর আগেও হয়রানির বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে খাদিজা আক্তার লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
সমাজসেবা বিভাগকে সংশোধনের জন্য পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে, ঘটনার সত্যতা সাপেক্ষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।