
যে গ্রামে একই পরিবারের সকলেই মাদকের কারবারী
বায়েজিদ বোস্তামী, ষ্টাফ রিপোর্টার
দেশে হস্তশিল্প, তাঁতবস্ত্র, কাঁসা শিল্প, পাটশিল্পসহ অনেক খাতেই বংশানুক্রমিক কারবারের দেখা মিললেও মাদককে পারিবারিক ব্যবসা হিসেবে গ্রহণ করার ঘটনা বিরল। এ রকম একটি পরিবারের সন্ধান মিলেছে গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার জালশুকা প্রকাশ এলাকায়।
দুই দশক আগে জালশুকা গ্রামের জামাত আলীর মেয়ের জামাই নেহাজউদ্দিনের হাত ধরে শুরু হয় জালশুকা গ্রামের মাদকের কারবার। সেই থেকে বংশানুক্রমিক তার ছেলে-মেয়ে, ছেলের বউ এবং নাতি-নাতি বউয়েরাও কারবার এগিয়ে নিয়ে চলেছে। ফেনসিডিল,গাঁজা,হিরোইনের পাশাপাশি ইয়াবা বিক্রির অন্যতম স্থান হয়ে উঠেছে পরিবারটির ভিটেমাটি। কালিয়াকৈর উপজেলার সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত মাদকের পাইকারী বাজার এবং সেবনের নিরাপদ স্থান হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছে। সেই থেকেই গ্রামের এই পরিবারটি ‘মাদক পরিবার’ হিসেবে কুখ্যাতি অর্জন করেছে। এই পরিবারের হাত ধরেই বড়ইছুটি এবং কাঞ্চনপুর গ্রামের আরও কয়েকজন যুবক গাজিপুর এবং সাভার এলাকার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এরা সকলেই পুলিশের খাতায় তালিকাভুক্ত চিহ্নিত মাদক কারবারী।
স্থানীয়রা জানান, কালিয়াকৈর উপজেলার আটাবহ ইউনিয়নের তিন নং ওয়ার্ডে এই গ্রামটির অবস্থান। এই মাদক ব্যবসার সাথে একই পরিবারের চিহ্নিত পুরুষ মহিলা জড়িত। জালশুকা গ্রামের জামাত আলীর মেয়ের জামাই নেহাজ উদ্দিন, মেয়ে জুলেখা বেগম, জামাত আলীর ছেলে জালাল উদ্দিন, জালালের বউ নাজমা বেগম, জালালের ছেলে নাজমুল হোসেন, জামাত আলীর বড় ছেলে ফরহাদ হোসেন, ফরহাদের পুত্র মোতালেব হোসেন, জামাত আলীর ভাতিজা সুরুজ এবং তার বউ এবং মেয়ে সফুরা বেগম এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। নেহাজ উদ্দিন, জালাল উদ্দিন, নাজমুল ইসলাম, জুলেখা বেগম এবং নাজমা বেগম অনেকবার পুলিশের হাতে মাদক সহ আটক হয়ে জেল হাজত খাটে। বর্তমানে এই গ্রামের অনেকই মাদক কারবারের সঙ্গে যুক্ত। জামাত-গফুরের পরিবারের প্ররোচনায় গড়ে উঠেছে মাদকের শক্তিশালী সিন্ডিকেট। ধীরে ধীরে এই মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়েছে গ্রামটির বেশ কয়েকজন যুবক। এই সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রনে রয়েছে স্থানীয় একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। পুলিশ এবং গোয়েšদা সংস্থা এদের বারবার আটক করলেও এই ব্যাক্তর সহায়তায় তারা ছাড়া পেয়ে যায়।
বাইরের বিভিন্ন এলাকা থেকে পরিবহন শ্রমিক ও উঠতি বয়সী ছেলে-মেয়েরা মাদক কিনতে এই গ্রামটিতে আসে। বিশেষ করে বিকেল ৪টার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মোটর সাইকেলে অসংখ্য কিশোর যুবক এখানে মাদক সংগ্রহের জন্য আসতে শুরু করে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, জালশুকা,কাঞ্চনপুর ও বড়ইছুটি গ্রামের অনেকই মাদক কারবারের সঙ্গে যুক্ত। বিভিন্ন সময়ে যারা প্রতিবাদ করেছেন তাদের লাঞ্ছিত হতে হয়েছে। পুলিশ মাঝে মধ্যে অভিযান চালিয়ে এক-দুইজনকে আটক করলেও তারা জামিনে বের হয়ে আসে এবং আবারও শুরু করে মাদকের কারবার। মাদক কারবারিরা এখানকার পরিবেশ পুরোপুরি নষ্ট করে ফেলেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আয়নাল হোসেন বলেন, ‘বর্তমানে জামাত আলীর মেয়ে জুলেখা ও তার স্বামী, নেহাজউদ্দিন ও ছেলে জালাল এবং নাতি হিরোইনসহ অন্যান্য মাদকের পাইকারি করবার করছেন। এই জালশুকা, কাঞ্চনপুর ও বড়ইছুটি গ্রামে অন্তত ২০ থেকে ২৫ জন চিহ্নিত মাদক কারবারি রয়েছে। তাদের সবাইকে আইনের আওতায় এনে সঠিক পুনর্বাসনের মাধ্যমে গ্রামের শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার দাবি জানাচ্ছি।
বড়্ইছুটি গ্রামের যুবক হজরত আলী বলেন, ‘বহুবার প্রতিবাদ করেছি। মাদক কারবার বন্ধ করা যায়নি। পুলিশ অভিযান চালালে মাদক কারবারির গা ঢাকা দেন। পরে আবার শুরু হয় কারবার। এখানে উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে মাদক কিনতে আসেন ছোট-বড় বিভিন্ন বয়সী মানুষ। মাদক কারবারিরা প্রভাবশালী হওয়ায় আগে শক্ত প্রতিবাদ করা যায়নি।
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত জামাত আলীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাদের কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তারিখঃ২৮/১১/২৪ইং
