সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:৩৮ পূর্বাহ্ন
Headline
Wellcome to our website...
দেবিদ্বার উপজেলার ইতিহাস, সংস্কৃতি ও সম্ভাবনার এক চিত্র
/ ৫ Time View
Update : রবিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৫, ২:১২ অপরাহ্ন

সাইফুল ইসলাম ফাহাদ, নিজস্ব প্রতিবেদক:

দেবিদ্বার উপজেলা বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক অঞ্চল। এটি দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত এবং সমৃদ্ধ ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত।

#ভৌগোলিক_অবস্থান_জনসংখ্যা

দেবিদ্বার উপজেলা কুমিল্লা জেলার উত্তরাংশে অবস্থিত। এর উত্তর দিকে ব্রাহ্মণপাড়া ও মুরাদনগর উপজেলা, দক্ষিণে কুমিল্লা সদর উত্তর উপজেলা, পূর্বে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা এবং পশ্চিমে মুরাদনগর উপজেলা অবস্থিত। ২০২১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, দেবিদ্বারের জনসংখ্যা প্রায় ৫ লক্ষাধিক, যেখানে পুরুষ ও নারীর সংখ্যা প্রায় সমান।

#ইতিহাস_ও_নামকরণ

দেবিদ্বার নামটির সাথে একটি জনপ্রিয় লোককথা জড়িয়ে আছে। কথিত আছে, প্রাচীনকালে এখানে এক দেবীর বিশাল মন্দির ছিল এবং সেই মন্দিরের দ্বারের নামানুসারে স্থানটির নাম হয় “দেবিদ্বার”। তবে কিছু ইতিহাসবিদ মনে করেন, ব্রিটিশ আমলে প্রশাসনিক প্রয়োজনে এই নামকরণ করা হয়েছিল।

#শিক্ষা_সংস্কৃতি

দেবিদ্বার শিক্ষা ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে। এখানে রয়েছে বহু প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ বিদ্যালয়, কলেজ এবং কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দেবিদ্বার সরকারি কলেজ, দেবিদ্বার মহিলা কলেজ প্রভৃতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উচ্চশিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করেছে। পাশাপাশি এখানে সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চাও কম নয়। নানা সময়ে কবিতা, নাটক ও সংগীত প্রতিযোগিতার আয়োজন হয়।

#অর্থনীতি_জীবনযাত্রা

দেবিদ্বারের অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। ধান, গম, আলু, সবজি ও নানা রকম ফলমূল উৎপাদন এখানে ব্যাপক। পাশাপাশি অনেক মানুষ প্রবাসে কর্মরত, যা রেমিট্যান্সের মাধ্যমে এখানকার অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এছাড়া ক্ষুদ্র ব্যবসা, হাঁস-মুরগি পালন, মাছচাষ ইত্যাদির মাধ্যমেও মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে।

#পর্যটন_সম্ভাবনা

দেবিদ্বারে কয়েকটি দর্শনীয় স্থান আছে, যা পর্যটকদের আকর্ষণ করতে পারে। প্রাচীন মসজিদ, মন্দির ও ঐতিহাসিক দালান-কোঠা ছাড়াও মনোরম গ্রামবাংলার প্রকৃতি এখানে সহজেই মুগ্ধ করে। ভ্রমণ ও বিনোদনের সুবিধা বাড়ানো হলে দেবিদ্বার পর্যটন সম্ভাবনার এক উজ্জ্বল ক্ষেত্র হয়ে উঠতে পারে।

#উন্নয়নের_চ্যালেঞ্জ_ভবিষ্যৎ

যদিও দেবিদ্বারে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে, তবুও কিছু চ্যালেঞ্জ এখনো রয়ে গেছে। বিশেষ করে আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা, প্রযুক্তি শিক্ষার প্রসার এবং টেকসই অবকাঠামো উন্নয়নে আরও মনোযোগ প্রয়োজন। স্থানীয় প্রশাসন এবং জনগণের যৌথ উদ্যোগে দেবিদ্বার একটি মডেল উপজেলা হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।

#উন্নয়ন_পরিকল্পনা_ভবিষ্যৎ_সম্ভাবনা

দেবিদ্বার উপজেলা কুমিল্লা জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক এলাকা, যা তার জনসংখ্যা, ভৌগোলিক অবস্থান এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রমের কারণে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। ভবিষ্যতে এই উপজেলার সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে বিভিন্ন খাতে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

১. অবকাঠামো উন্নয়ন

সড়ক ও যোগাযোগ: উপজেলার অভ্যন্তরীণ সড়কসমূহের উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ, নতুন সড়ক নির্মাণ এবং ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মাণের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হচ্ছে।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি: শতভাগ বিদ্যুতায়নের লক্ষ্যে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান, বিদ্যুৎ সরবরাহের নিরবচ্ছিন্নতা নিশ্চিতকরণ এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎস ব্যবহারের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

২. শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি, বিদ্যমান বিদ্যালয়গুলোর অবকাঠামো উন্নয়ন এবং শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে।

কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা: যুব সমাজকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরের জন্য কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন এবং বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে।

৩. স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়ন

স্বাস্থ্য কেন্দ্র: উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রসমূহে চিকিৎসা সেবা উন্নয়ন, নতুন চিকিৎসক নিয়োগ এবং আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ করা হচ্ছে।

মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য: মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু হার হ্রাসের জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি, টিকাদান কর্মসূচি এবং পুষ্টি বিষয়ক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।

 

৪. কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা

কৃষি প্রযুক্তি: আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি সরবরাহ, কৃষকদের প্রশিক্ষণ এবং উন্নত বীজ ও সার প্রদান করা হচ্ছে।

সেচ ব্যবস্থা: সেচ সুবিধা সম্প্রসারণের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে।

৫. শিল্প ও বাণিজ্য উন্নয়ন

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প: স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যের বাজারজাতকরণ, হস্তশিল্প ও কুটির শিল্পের উন্নয়ন এবং উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে।

বিনিয়োগ: স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য অবকাঠামো উন্নয়ন এবং বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে।

৬. পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা

বনায়ন ও পরিবেশ সংরক্ষণ: বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, জলাশয় সংরক্ষণ এবং বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তন: জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় সচেতনতা বৃদ্ধি এবং টেকসই কৃষি ও অবকাঠামো উন্নয়নের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে।

#উপসংহার

দেবিদ্বার উপজেলার উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই অঞ্চলটি একটি মডেল উপজেলায় পরিণত হতে পারে। অবকাঠামো, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্প ও পরিবেশ খাতে সমন্বিত উন্নয়নের মাধ্যমে দেবিদ্বার উপজেলায় টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব। এজন্য স্থানীয় প্রশাসন, জনগণ এবং বেসরকারি খাতের সমন্বিত প্রচেষ্টা অপরিহার্য।

দেবিদ্বার উপজেলা তার ইতিহাস, সংস্কৃতি, অর্থনীতি এবং মানবসম্পদের মাধ্যমে বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে অবদান রেখে চলেছে। সামনের দিনে পরিকল্পিত উন্নয়ন ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে দেবিদ্বার আরো সমৃদ্ধ এবং আধুনিক এক জনপদে পরিণত হবে — এটাই সকলের প্রত্যাশা।

আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
Our Like Page