শেষ মুহূর্তে মান্নান-ডন বলয়ের উত্তেজনা,
শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন,
আগামী ৫ জুন শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। নির্বাচনকে ঘিরে সুনামগঞ্জ-৩ (শান্তিগঞ্জ-জগন্নাথপুর) আসনের সংসদ সদস্য সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আজিজুস সামাদ ডন বলয়ের বাগযুদ্ধ চলছে। সমান তালে চলছে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের কথার লড়াই। এম এ মান্নানের বিরুদ্ধে এলাকায় প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ করেছেন ডন সমর্থক সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম। এমন বক্তব্যের জবাব সচরাচর যেভাবে রাজনীতিকরা দেন, সেভাবে দিচ্ছেন না সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের পুত্র শান্তিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি সাদাত মান্নান অভি। তিনি বলছেন, আমরা আইন জানি, আইন মানি, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। সকল গাইডলাইন মেনেই কাজ করছি। এদিকে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, এসব অভিযোগ সঠিক নয়। এলাকার মানুষের দাবি ও চাপ আছে আমার ছেলের উপর, তাই সে নির্বাচন করছে।
নির্বাচনকে সামনে রেখে এই বাগযুদ্ধ শুরু হয় গত ২২ মে । ওই দিন জগন্নাথপুরে একই সময়ে পৃথক দুইটি কর্মীসভা অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আজিজুস সামাদ জগন্নাথপুর পৌর শহরের ভবানীপুর গ্রামে তাঁর অস্থায়ী বাসভবনে কর্মীসভা করে শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী আবুল কালাম কে সমর্থন দেন। সভায় আজিজুস সামাদ ডন বলেন, ‘আবুল কালাম দলের নিবেদিত নেতা, তাই আমি তাকে সমর্থন জানিয়েছি এবং সুষ্ঠু নির্বাচনে যাতে জনরায় প্রতিফলিত হয়, সে লক্ষ্যে আমি কাজ করার আশ্বাস দিয়েছি।’
অপরদিকে একই সময়ে জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সভা করে সংসদ সদস্য এম এ মান্নানের ছেলে শান্তিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি শাহাদাত মান্নান অভির পক্ষে শান্তিগঞ্জে গিয়ে প্রচারণা চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ। এরপরই সুনামগঞ্জ-৩ আসনের দুই উপজেলার আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে বিভক্ত হয়ে পড়েন।
জানা যায়, ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুনামগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন এম এ মান্নান। এই নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসাবে ফুটবল প্রতীক নিয়ে লড়েন প্রয়াত জাতীয় নেতা আব্দুস সামাদ আজাদ’র ছেলে আজিজুস সামাদ ডন। এরপর থেকে স্থানীয় প্রায় সকল নির্বাচনে এই দুই বলয়ের (মান্নান ও ডন) দুই প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আসছেন। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় ভেদাভেদ ভুলে আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ হয়ে দলের প্রার্থী এমএ মান্নানের পক্ষে প্রচারে অংশ নেন। ওই নির্বাচনে প্রথমবারের মতো মান্নানের পক্ষে আজিজুস সামাদ ডন ভোট চেয়েছিলেন। এরপর কিছুদিন দলীয় নেতাকর্মীদের প্রকাশ্যে কোন্দলে দেখা যায়নি। তবে আগামী ৫ জুন শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাচনকে সামনে রেখে পৃথক অবস্থান নিয়েছেন দুই বলয়ের নেতাকর্মীরা।
ডন সমর্থক সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম বলেছেন, আমাদের এলাকায় আগে যিনি মন্ত্রী ছিলেন তিনি (এম এ মান্নান) বর্তমানে এমপি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘এমপির ছেলে-মেয়ে-স্ত্রী নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবেন না। যে আমার কথা শুনবে না, সে তার পরিবারের রাজনীতি করুক, আমার রাজনীতি ছাড়–ক।’ কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা উপেক্ষা করে আমাদের এলাকার এমপি তার ছেলেকে ভোটে দাঁড় করিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী এরকম উক্তির পর কেউ তাঁর (এম এ মান্নান) ছেলেকে ভোট দেবে না। কারণ উনি (এম এ মান্নান) প্রধানমন্ত্রীর বিরোধীতা করছেন।
প্রধানমন্ত্রী উনাকে (এম এ মান্নান) চারবার এমপির নমিনেশন কার্ড দিয়েছেন এবং দুইবার মন্ত্রী বানিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এরপরও উনি প্রধানমন্ত্রীর সামান্য অনুরোধ রক্ষা করতে পারেন নি। এছাড়াও তিনি এলাকার বিভিন্নস্তরের জনগণকে নিয়ে প্রকাশ্যে নির্বাচনী ক্যাম্পেইন করে যাচ্ছেন। বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলছেন। নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের শংকা রয়েছে। আমি মনে করি সরকার এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবে- যাতে নির্বাচনে গন্ডগোল, কারচুপি না হয়। তবে আমরা জনগণকে নিয়ে সচেতন আছি- এরকম কোন পরিস্থির সৃষ্টি হলে মোকাবেলার জন্য। এব্যাপারে আমি অভিযোগও করেছি।
আবুল কালাম বলেন, আশা করি উপজেলার জনগণ আমাকে উন্নয়ন ও এলাকার শান্তির স্বার্থে ভোট দিবেন। এরআগেও উপজেলা চেয়ারম্যান থাকাকালে আমি উপজেলার অনেক উন্নয়ন করেছি। জনগণের যে কোন বিপদ-আপদে আমি পাশে দাঁড়িয়েছি। মানুষের পাশে থাকার কারণে উপজেলা নির্বাচনে আমার বিজয় হবে বলে আশা করি।
সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের ছেলে ও শান্তিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি সাদাত মান্নান অভি বললেন, উনি (মো. আবুল কালাম) যদি কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দেখাতে পারেন- তাহলে দেখান না কেন। আমার চোখে এরকম কিছু পড়ে নি। তিনি বলেন, আমরা আইন জানি, আইন মানি ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। সকল গাইডলাইন মেনেই আমি কাজ করছি।
আমি ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, সবাই আমাকে আপন করে নিয়েছেন। আমি আমার জীবনের সর্বোচ্চ সম্মান পেয়েছি গত পাঁচ-ছয় মাসে। প্রত্যেকটা গ্রামে এবং হাটিতে আমার যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। সকলের সাথে আমার আন্তরিক কথাবার্তা হয়েছে, তারা নিজেদের সমস্যা সম্পর্কে আমাকে বলেছেন। বলতে গেলে, উপজেলার সকল শ্রেণীপেশার মানুষের সাথে আমার আত্মার সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। তিনি বলেন, শান্তিগঞ্জের মানুষ উন্নয়ন, সম্প্রীতি ও শিক্ষিত-পরিশিলিত-কর্মদক্ষ সমাজের পক্ষে। জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদি।
সুনামগঞ্জ-৩ (শান্তিগঞ্জ-জগন্নাথপুর) আসনের সংসদ সদস্য, সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এম এ মান্নান বলেন, তিনি (মো. আবুল কালাম) যে অভিযোগ করেছেন তা সঠিক নয়। দল আমাকে মৌখিক বা লিখিত কোন নির্দেশনা দেয়নি, আমিও নির্দেশনা পাইনি। খবরের কাগজে সকল মানুষের মতো আমিও পড়েছি। এ বিষয়ে একসময় কিছু আলোচনা হয়েছে, বিষয়টি সমাধানও হয়ে গেছে। অনেকে নির্বাচন করেছে। তিনি বলেন, এলাকার মানুষের দাবি ও চাপ আছে আমার ছেলের উপর, তাই সে নির্বাচন করছে।