

পাবনায় ৩ টি কবরস্থান হতে ৪ মাসে কঙ্কাল চুরি ২৩ টি
নিজস্ব প্রতিবেদক 24Hrs tvঃ স্বপন
২৯ জুন ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ
পাবনায় কবরস্থান হতে দিন দিন বেড়েই চলেছে কঙ্কাল চুরি। তবে এখনও পর্যন্ত এ চক্রের কেউ প্রশাসন এর হাতে ধরা পড়েনি। ফলে কবরস্থানে রাখা মরদেহ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন স্বজনরা।
জানা গেছে, পাবনায় কঙ্কাল চুরির প্রথম ঘটনা জনসম্মুখে আসে ২০১৯ সালে। তবে পাঁচ বছর পর এবার হঠাৎই কঙ্কাল চুরি মারাত্মকভাবে বেড়েছে। গত ৪ মাসে তিন কবরস্থান থেকে চুরি হয়েছে ২৩ কঙ্কাল।
চলতি বছরের ১৮ মার্চ গভীর রাতে বেড়া উপজেলার খাস আমিনপুর কবরস্থান থেকে ১৫টি কঙ্কাল চুরি হয়। স্থানীয় সূত্র জানায়- গভীর রাতে মোট ৯ দুর্বৃত্ত এসব কঙ্কাল চুরিতে অংশ নেয়। তারা কঙ্কালগুলো বড় ব্যাগে ভরে নিয়ে যায়। সকালে ঘটনা জানাজানি হলে এলাকায় শোরগোল পড়ে।
খাস আমিনপুর কবরস্থানের পাশের এক বাড়ির গৃহবধূ রেখা খাতুন জানান, সেহরির কিছু আগে ঘুম থেকে জেগে দেখেন কবরস্থান থেকে ৯ জন বেরিয়ে যাচ্ছে। তাদের পরনে ছিলো কালো প্যান্ট ও কালো গেঞ্জি। তাদের কাছে বড় বড় ব্যাগ ছিল।
তিনি আরও জানান, বিষয়টি দেখার পর বাড়ির অন্য সদস্য ও পাশের লোকজনকে জানানো হয়। তখন লোকজন কবরস্থানে গিয়ে দেখে কঙ্কাল চুরি হয়েছে।
এদিকে গত ৭ জুন রাতে সুজানগর উপজেলার দুলাই ইউনিয়নের চিনাখড়া কেন্দ্রীয় কবরস্থান থেকে পাঁচটি কঙ্কাল চুরি হয়। এর দুদিন পর ৯ জুন রাতে সাঁথিয়া উপজেলার রাজাপুর কেন্দ্রীয় কবরস্থান থেকে পাঁচটি কঙ্কাল চুরি হয়।
পাবনা জেনারেল হাসপাতালের কনসালট্যান্ট ও বিএমএ পাবনার সাধারণ সম্পাদক ডা. আকসাদ আল মাসুর আনন জানান, হাসপাতালে যেসব লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে পড়ে থাকে, সেগুলোকে সাধারণত নেওয়া হয়। এরপর শিক্ষার্থীদের শেখার জন্য সেগুলো কাটাছেঁড়া করে শরীরের ভেতরে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কোথায় কী আছে তা শিক্ষার্থীদের দেখানো হয়। প্রথম এবং দ্বিতীয় বর্ষের মেডিকেল শিক্ষার্থীদের জন্য কঙ্কাল অত্যাবশ্যক। দেশে সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজে বেড়ে যাওয়ায় কঙ্কালের চাহিদা বেড়েছে। তবে কঙ্কাল সংগ্রহে সরকারি কোনো নীতিমালা নেই।
পাবনা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ উবায়দুল্লাহ ইবনে আলী বলেন, শিক্ষার্থীরা সাধারণত তাদের সিনিয়রদের কাছ থেকে কঙ্কাল কিনে থাকে। কেউ কেউ হাসপাতালের ডোমদের মাধ্যমেও সংগ্রহ করে। আবার ভারত থেকে চোরাপথে আসা কঙ্কাল কেনার কথাও শেনা যায়। কঙ্কাল কম পাওয়ার জন্য দিনে দিনে এর দাম বাড়ছে। তবে কবরস্থান থেকে চুরি যাওয়া কঙ্কাল কোথায় যায় এটা জানা নেই।
পাবনার সুজানগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জালাল উদ্দিন জানান, চিনাখড়া কবরস্থানের কঙ্কাল চুরির পর ওই কবরগুলোর একটির পাশে একটি মোবাইল ফোন পড়ে ছিল। সেই মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে দুইজনকে ৫৪ ধারায় আটক করা হয়। পরে রিমান্ড আবেদন করা হলেও আদালত তা নামঞ্জুর করায় বিস্তারিত জানা যায়নি।
পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুলিশ সুপার পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মাসুদ আলম জানান, কঙ্কাল চোর এ পর্যন্ত ধরা হয়নি। তবে এ ব্যাপারে বেশ কয়েকটি তদন্ত চলছে। পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতেও এ চক্র অপকর্ম করছে কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।