শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৫০ অপরাহ্ন
Headline
Wellcome to our website...
দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বাতিঘর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ
/ ৪২ Time View
Update : রবিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৫, ১০:০৯ পূর্বাহ্ন

সাইফুল ইসলাম ফাহাদ,নিজস্ব প্রতিবেদক:
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ১৮৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কলেজটি শুধু কুমিল্লা নয়, সমগ্র দেশের শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।

কুমিল্লা কান্দিরপাড়ের কেন্দ্রভূমিতে অবস্থিত ভিক্টোরিয়া কলেজটি দ্যুতি ছড়াচ্ছে ব্রিটিশ আমল থেকে। এই কলেজ থেকে বেরিয়েছেন নামী রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, লেখক ও সাংবাদিক। বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলন ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখে এই কলেজের শিক্ষার্থীরা।

**প্রতিষ্ঠা ও ইতিহাস:**
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ এক শতকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের শিক্ষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও সভ্যতার ধারক ও বাহক। যা দক্ষিণ পূর্ব বাংলার শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ নামে খ্যাত। এই সুখ্যাতির পেছনে রয়েছে কলেজটির সুদীর্ঘ সমৃদ্ধ ইতিহাস ও ঐতিহ্য। তৎকালীন জমিদার রায় বাহাদুর আনন্দচন্দ্র রায় এর উদ্যোগে ১৮৮৬ সালে ‘রায় এন্ট্রাস স্কুল’ নামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৮৮ সালে মহারানী ভিক্টোরিয়ার রাজত্বের ৫০ বছরের সুবর্ণ জয়ন্তী স্মারক চিহ্ন স্বরুপ এর নাম পরিবর্তন করে ভিক্টোরিয়া স্কুল নামকরণ করা হয়। বর্তমানে স্কুলটির নাম ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুল।স্কুলটির সাফল্য ও পূর্ব ভারতে ক্রমবর্ধমান উচ্চ শিক্ষার চাহিদা বৃদ্ধি পেতে থাকলে ১৮৯৯ সালে জমিদার রায় বাহাদুর আনন্দচন্দ্র রায় রানী ভিক্টোরিয়ার নামে কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন। কলেজটি প্রতিষ্ঠার পর ব্রিটিশ সরকার তাকে রায় বাহাদুর উপাধি প্রদান করে। তার স্মৃতি রক্ষার্থে ভিক্টোরিয়া কলেজের ইন্টারমিডিয়েট শাখার প্রধান ফটকে একটি সাদা রঙের ভাস্কর্য তৈরি করা হয়েছে।

* কুমিল্লার স্থানীয় জমিদার রায় বাহাদুর আনন্দচন্দ্র রায় এই কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন।
* তৎকালীন ব্রিটিশ রানী ভিক্টোরিয়ার নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়।
* শুরুতে এটি একটি বেসরকারি কলেজ ছিল, পরবর্তীতে সরকারি কলেজে রূপান্তরিত হয়।
* কলেজটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

**অবকাঠামো ও শিক্ষা কার্যক্রম:**

* কুমিল্লা শহরের প্রাণকেন্দ্রে এর অবস্থান।
* কলেজের দুটি প্রধান ক্যাম্পাস রয়েছে – উচ্চ মাধ্যমিক শাখা কান্দিরপাড়ে এবং স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শাখা ধর্মপুরে অবস্থিত।
* এখানে বিজ্ঞান, কলা ও বাণিজ্য – এই তিনটি বিভাগেই উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষা প্রদান করা হয়।
* কলেজটিতে সুবিশাল খেলার মাঠ, সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার ও আধুনিক গবেষণাগার রয়েছে।

ঐতিহ্য মন্ডিত কলেজটির শিক্ষার্থীদের অবস্থান সর্ব মহলে বিদ্যমান। শ্রেষ্ঠত্বের বিচারে দক্ষিণ পূর্ব বাংলার শ্রেষ্ঠবিদ্যাপীঠ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ সৃষ্টি লগ্ন থেকেই। ২০১৭ সালে জাতীয় ভাবে কলেজ পারফরম্যান্স র‍্যাংকিং অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ। চট্টগ্রাম বিভাগীয় পর্যায়ে প্রথম সেরা ৫ কলেজ ক্যাটাগরিতে প্রথম স্থান অধিকার করে ভিক্টোরিয়া কলেজ।

**সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড:**
১৯২১-১৯২৩ সাল পর্যন্ত কাজী নজরুল ইসলাম অবস্থান করেছিলেন কুমিল্লায়। তার আড্ডা দেওয়া ও কবিতা লেখার স্থানটি ছিলো ভিক্টোরিয়া কলেজের সামনেই রানীর দিঘীর পশ্চিম পাড়ে। কলেজ ছাত্রদের সাথে তার ছিলো দারুণ সখ্যতা।আড্ডা দেওয়া,গান গাওয়া ছিলো তখন রোজকার ব্যাপার। ১৯২৬ সালে ফেব্রুয়ারিতে কলেজ প্রাঙ্গণে এসে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

উপমহাদেশের কিংবদন্তি শিল্পী শচীন দেববর্মন, ভাষা আন্দোলনের সৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, জাতীয় পতাকার রূপকার শিবনারায়ণ দাস এই কলেজের ছাত্র ছিলেন। বিখ্যাত ব্যক্তিদের আগমন এবং এই কলেজের ছাত্র যারা পরবর্তিতে শ্রেষ্ঠত্বের তালিকায় নিজেদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখেছে তাদের পদচারণায় যেন এক বিশেষত্ব ও গৌরব দান করেছে ভিক্টোরিয়া কলেজকে।

* শিক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও এই কলেজটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
* বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন ও ক্লাব শিক্ষার্থীদের প্রতিভা বিকাশে সহায়তা করে।

**বর্তমান অবস্থা:**
১২৬ বছরের পুরনো এই কলেজটির আছে বহু ইতিহাস। যা লিখতে গেলে কয়েকশ দিস্তা শেষ হয়ে যাবে। তিতাশ চৌধুরী লিখেছেন, ‘প্রাচীনত্বের বিচারে এই কলেজটি বুড়োদের দলেই পড়ে’। মূলত এই কলেজটিই ছিল এই অঞ্চলের অন্ধকার যুগের শিক্ষা-সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। তবে পাকিস্তান সৃষ্টির পর এই কলেজের নাম পরিবর্তনের চেষ্টা করা হয়। ‘ভিক্টোরিয়া’ শব্দটি ছেঁটে ফেলে দেয়ার চিন্তা করা হয়। শেষ পর্যন্ত তা আর সম্ভব হয়ে ওঠেনি।

সারা বিশ্বেই এ কলেজের শিক্ষার্থীরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এ অঞ্চলের বাতিঘর ভিক্টোরিয়া কলেজ শিক্ষিত নাগরিকের পাশাপাশি মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ তৈরি করছে। বলা হয়ে থাকে, ‘কীর্তিমানের মৃত্যু নেই’। কীর্তিমানদের অবদানে চিরঞ্জীব হয়ে থাকবে বিদ্যাপীঠটি।

* বর্তমানে কলেজটিতে প্রায় ২৯,৯০০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।
* কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা দেশ-বিদেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ শুধু একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, এটি কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক।

আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
Our Like Page