
পতেঙ্গার চাঁদাবাজি সাম্রাজ্য তাজু ও স্থানীয় রাজনৈতিক চক্রের ছায়া
অনুসন্ধানী প্রতিবেদক: দীলিপ কান্তি নাথ চট্টগ্রাম
চট্টগ্রাম, পতেঙ্গা: ফ্যাসিবাদের আমল থেকে শুরু করে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পর্যন্ত চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় একজন বিশেষ নেতার ভূমিকা রহস্যময়। মোঃ তাজু নামের এই ব্যক্তি, আওয়ামী লীগের সময় নারী শক্তির সংগঠনের নেতার ভূমিকায় সক্রিয় ছিলেন। সেই সময়ে তিনি স্থানীয় খালপাড়, মার্কেট ও দোকানদারদের ওপর প্রভাব বিস্তার করে দাপিয়ে বেড়াতেন।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
মোঃ তাজু, আওয়ামী লীগের সময় স্থানীয় ইউনিট কমিটির সাধারণ সম্পাদক নেজাম উদ্দিন নাজ্জুর ছোট ভাই হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ফ্যাসিবাদের আমলে তিনি বিশেষ ধরনের ‘মানুষ জোগাড়ের স্পেশালিস্ট’ হিসেবেও খ্যাত ছিলেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি হঠাৎ করেই রাজনৈতিক allegiance পরিবর্তন করে বিএনপিতে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা সদস্য এবং চট্টগ্রাম ১১ সম্ভাব্য প্রার্থী ইসরাফিল খসরুর সাথে দেখা গেছে।
পতেঙ্গায় চাঁদাবাজি ও ভয়ভীতি
সরেজমিনে অনুসন্ধানকালে জানা যায়, পতেঙ্গার ৪০নং ওয়ার্ডের উত্তর পতেঙ্গা পূর্ব হোসেন আহম্মেদ পাড়া খালপাড়ে টিএনটি টেলিফোন ভবনের সামনে খালের দুই পাশে শতাধিক দোকান তৈরি হয়েছে। প্রতিটি দোকানদারকে জামানত বাবদ ২০ হাজার টাকা, দৈনিক ভাড়া ১০০ টাকা এবং কারেন্ট বিল বাবদ ৩০ টাকা দিতে হয়। এই চাঁদাবাজি কার্যক্রম চালাচ্ছেন জাহাঙ্গীর ও আব্বাস নামে দুজন এবং তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মোঃ তাজু।
তাজুর সহযোগী হিসেবে এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন মোঃ আব্বাস, মোঃ আক্তার, মোঃ জাহাঙ্গীর সহ আরও অসংখ্য চাঁদাবাজ। স্থানীয় সূত্র জানায়, চাঁদাবাজি ছাড়াও তারা ভাড়া আদায় ও ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে আতঙ্ক সৃষ্টি করে রাখেন।
প্রশাসনিক চোখে তাজু
ফ্যাসিবাদের সময়ও প্রশাসন ও স্থানীয় নেতাদের চোখের আড়ালে তিনি দাপিয়ে বেড়াতেন। বর্তমানে বিএনপিতে যোগ দেওয়ার পরও তার কার্যক্রম নজর এড়িয়ে চলছে। বিশেষভাবে দেখা গেছে, তার নেতৃত্বে স্থানীয় সিনিয়র বিএনপি নেতারা এই কার্যক্রমে নিরব ভূমিকা রাখছেন।
ভয়ভীতি ও স্থানীয় প্রতিক্রিয়া
তাজুর সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে রোহিঙ্গা আক্তার ও বাতাসির নাতিন জামাই এলাকায় কালো ওয়াকিটকি নিয়ে ঘোরেন। তারা দোকানদার, ভ্যানওয়ালা, মাছ-সবজি ব্যবসায়ীসহ স্থানীয়দের ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদাবাজি চালান। এ বিষয়ে ভুক্তভোগীরা আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।
অনুসন্ধানের প্রশ্ন
তাজু কীভাবে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে আজও এই সাম্রাজ্য বজায় রাখতে পারছেন?
বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সহায়তায় তার কার্যক্রম কি বৈধ হয়ে উঠছে?
ফ্যাসিবাদ পরবর্তী প্রশাসন ও স্থানীয় নেতারা কি তার অতীত কার্যক্রম জানতেন, নাকি রাজনৈতিক সম্পর্কের কারণে তাকে আড়াল করা হয়েছে?
এই প্রথম পর্বে প্রকাশিত তথ্য ও সাক্ষ্য সূত্র পরবর্তী পর্বের জন্য প্রাথমিক ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে। পরবর্তী পর্বে মোঃ তাজুর আর্থিক লেনদেন, স্থানীয় চক্রের বিস্তারিত কাঠামো ও প্রশাসনিক অনিয়মের দিকগুলো আলোকপাত করা হবে।
