

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের আত্মপ্রকাশ
নিজস্ব প্রতিবেদক; 24Hrs tv
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অনেক কিছুই পরিবর্তন হচ্ছে। বের হয়ে আসছে নতুন নতুন তথ্য। এই পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে ছাত্র রাজনীতিতেও। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন ছাত্র রাজনীতি বন্ধের ঘোষণা আসছে ঠিক সেই সময় দীর্ঘদিন ক্যাম্পাসে গোপনে রাজনীতি পরিচালনা করে আসা ইসলামী ছাত্র শিবিরও এবার প্রকাশ্যে এসেছে। যা নিয়ে ঝড় উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়াতে। পক্ষে বিপক্ষে মতামত নিয়ে সরগরম এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক থেকে শিবির সভাপতি ঘোষণা দেওয়ায় অবাক হচ্ছে অনেকে।
হঠাৎ করে নিজের ফেসবুক আইডিতে বার্তা দিয়ে নিজের পরিচয় প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠক আবু সাদিক কায়েম। নিজের ফেসবুক আইডিতে স্ট্যাটাস দিয়ে জানিয়েছেন, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি। সমন্বয়কের তালিকায় তার নাম না থাকলেও জুলাই মাসে চলা ছাত্র আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের নেতাকর্মীদের নিয়ে মাঠে ছিলেন সাদিক কায়েম। তালিকায় নাম থাকা সমন্বয়কদের সঙ্গে বিভিন্ন ছবিতেও তাকে দেখা গেছে। উপদেষ্টা পরিষদের শপথ অনুষ্ঠানেও বঙ্গভবনেও উপস্থিত ছিলেন সাদিক।
সাদিক কায়েমের পরিচয় প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে নানা আলোচনার ঝড়। এক স্ট্যাটাসে প্রবাসী সাংবাদিক অবাক কার স্ট্যাটাস দিয়েছেন। হঠাৎ সালমানের শিবির পরিচয়ে অবাকও হয়েছেন প্রবাসী। সালমানের প্রকৃত নাম সাদিক কাঁইয়ূম। এদিকে, মানবাধিকারকর্মী ডা. পিনাকী ভট্টাচার্য বিষয়টি বেশ ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন। ঢাবিতে শিবিরের রাজনীতি প্রকাশ্যে শুরু হলে বিরাজনীতিকরণের পরিকল্পনা ঠেকিয়ে দেয়া যাবে বলে মনে করেন তিনি।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম ফেসবুকে এক পোস্ট দিয়ে বলেন, সাদিক কায়েম শিবিরের ঢাবি শাখার সভাপতি। দুয়েকদিনের মধ্যে সেক্রেটারিসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কার হাতে ক্ষমতা, আর যায় কোথায় ! একপক্ষ ফেসবুক গরম করছে শিবিরের উত্থান দেখে আর এক পক্ষ স্বাগত জানিয়ে হাত তালি দিতে ব্যস্ত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-রাজনীতি নিষিদ্ধের যে আলোচনা চলছে তা নিয়ে ২১ সেপ্টেম্বর দুপুরে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে ১০টি ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান। সেখানে ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতিনিধি হিসেবে সাদিক কায়েমকে দেখা যায়। তখন তিনি সেখানে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ না করে এর ব্যাপক সংস্কারের দাবি জানান। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সাদিক কায়েম নিজেকে ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি বলে পরিচয় দেন।
জানা গেছে, সাদিক কায়েম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার বাড়ি খাগড়াছড়ি শহরের বাজার এলাকায়। তার বাবা জেলা শহরের একজন কাপড় ব্যবসায়ী। তার ছোট ভাইও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে জানা গেছে।সাদিক খাগড়াছড়ি বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া আদর্শ মাদ্রাসা থেকে দাখিল এবং পরবর্তীতে চট্টগ্রামের বায়তুশ শরফ থেকে আলিম পাস করেন। এরপর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে। আত্মগোপন ছিল দীর্ঘদিন ছাত্রশিবির, আজ তা প্রকাশ হতে চলেছে। কোঠা আন্দোলনকে সামনে রেখে বাংলাদেশকে ক্ষমতা দখল করার চিন্তা ভাবনা ছিল আগে থেকেই। সাধারণ ছাত্র ও জনগণ কোনভাবে বুঝতেই পারে নাই আন্দোলনের নামে দেশের এই অবস্থা হবে।