

বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনায় আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন।
এইচ. এম বাবলু হাসান
স্টাফ রিপোর্টার, চকরিয়া -কক্সবাজার
২২ জুন, ২০২৪ মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা অর্জনে নেতৃত্বদানকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন করেছে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের চকরিয়া উপজেলা। এদেশের বৃহত্তম ও সর্ব প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে ‘প্লাটিনাম জয়ন্তী’ উদযাপন করেছে চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল হক সাঈদীর নেতৃত্বে। দুপুর ২ টার পর থেকে ডাক বাংলোতে লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে।আওয়ামিলীগ ও অঙ্গসংগঠনের সর্বস্তরের নেতা কর্মীদের উপস্থিতে।বিকেল চারটার পর ডাকবাংলো হতে মিছিল শুরু করে, থানা রাস্তার মোড় পর্যন্ত গিয়ে, ডাচ বাংলা ব্যাংক মোড়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত আলোচনা সভায় সভাপতিত্বে করেন উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদি জেলা আওয়ামীলীগের নেতা সরওয়ার আলম, এতে আরো উপস্থিত ছিলেন, কাকারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহাব উদ্দীন, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম শহিদ,সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি, শওকত ওসমান, পৌরসভা আট নং ওয়ার্ড কমিশনার মুজিবুল হক মুজিব, পৌরসভা উপজেলা যুবলীগের অর্থ সম্পাদক আজিজুল হক আজিজ, শ্রমীকলীগের সভাপতি জামাল উদ্দীন, কৃষকলীগের সভাপতি আমির হোসেন আমু, সাংগঠনিক সম্পাদক এইচ. এম বাবলু হাসান, পৌরসভা দুই নং ওয়ার্ড আওয়ামিলীগের সাধারণ সম্পাদক বাদশা মিয়া যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ।
এতে বক্তারা বলেন, গত সাড়ে সাত দশক ধরে আওয়ামী লীগের পথচলা ছিল গৌরবোজ্জ্বলের। দীর্ঘ এই পথচলায় সংগঠনটি বাঙালি জাতির অধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সকল প্রতিবন্ধকতা জয় করে সফলতার মুকুটে সংযুক্ত করেছে একের পর এক পালক। পৃথিবীর খুব কম সংগঠন আছে যারা ধারাবাহিক সাফল্য নিয়ে ৭৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন করার সৌভাগ্য অর্জন করেছে। অনুরূপভাবে গৌরব, সাফল্য ও অর্জনের সঙ্গে আওয়ামী লীগ তার প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী ও সুবর্ণ জয়ন্তী পালনের বিরল সৌভাগ্যের অধিকারী। উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদি বলেন, ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরনো ঢাকার ঐতিহ্যবাহী রোজ গার্ডেনে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে এই রাজনৈতিক দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কারাগারে আটক ছিলেন। তাঁকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়। কেন্দ্রীয়ভাবে নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ করা হলেও পরবর্তী সময়ে অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক আদর্শের অধিকতর প্রতিফলন ঘটানোর জন্য এর নাম ‘আওয়ামী লীগ’ করা হয়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বিজয়ের পর ১৯৫৫ সালে অনুষ্ঠিত আওয়ামী মুসলিম লীগের কাউন্সিলে দলের নাম থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দেওয়া হয়। আর ‘পূর্ব পাকিস্তান’ শব্দ দুইটি বাদ পড়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় থেকে। বাংলাদেশে স্বাধীনতা ঘোষণা করার পর থেকে প্রবাসী সরকারের সব কাগজপত্রে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নাম ব্যবহার শুরু হয়। ১৯৭০ সাল থেকে এই দলের নির্বাচনী প্রতীক নৌকা। পরবর্তী সময়ে দেশের অন্যতম প্রাচীন এই সংগঠনটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে এদেশের গণমানুষের সংগঠনে পরিণত হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বের জন্যই আওয়ামী লীগকে ’৭০-এর নির্বাচনে পূর্ব-বাংলার মানুষ তাদের মুক্তির ম্যান্ডেট দিয়েছিল। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই ভূখন্ডে প্রতিটি প্রাপ্তি ও অর্জন সবই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই হয়েছে। মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষা থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত বাঙালির অর্জন এবং বাংলাদেশের সকল উন্নয়নের মূলেই রয়েছে আওয়ামী লীগ। এই দলের অর্জন বাংলাদেশের অর্জন। জাতির জন্য যখন যা প্রয়োজন মনে করেছে, সেটি বাস্তবায়ন করেছে দলটি। ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ, সব আন্দোলন সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশ গঠনে সর্বোচ্চ ভূমিকা পালন করেছে আওয়ামী লীগ। স্বাধীনতার পর থেকে দেশ বিরোধীদের ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে এসে স্বৈরশাসনের অবসান ঘটিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। আওয়ামী লীগ দেশের অন্যতম পুরনো, অসাম্প্রদায়িক, সর্ববৃহৎ ও বাঙালির জাতীয় মুক্তির সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল। আর অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার কাজ প্রথম শুরু করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, আইয়ুবের সামরিক শাসন-বিরোধী আন্দোলন, ৬৪-এর দাঙ্গার পর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা, ৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলন ও ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের পথ বেয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের ২৪ বছরের আপোষহীন সংগ্রাম-লড়াই এবং ১৯৭১ সালের নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধ তথা সশস্ত্র জনযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ওই বছরের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের মধ্যদিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় বাঙালির হাজার বছরের লালিত স্বপ্নের ফসল স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।
পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার ব্যর্থ চেষ্টা হলেও দীর্ঘ একুশ বছর লড়াই সংগ্রামের মাধ্যমে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জয়ী হয়ে ২৩ জুন দলটি ক্ষমতায় ফিরে আসে। পরবর্তীতে বিএনপি-জামাত জোট সরকারের অপশাসন, দমন পীড়নের বিরুদ্ধে আন্দোলন এবং অগণতান্ত্রিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আওয়ামী লীগ ‘দিন বদলের সনদ’ ঘোষণা দিয়ে ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের ভোটে পুনরায় বিজয় অর্জন করে এবং সেই থেকে টানা ৪ বার নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করে। আওয়ামী লীগ সরকার জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচারের রায় কার্যকর করেছে। এছাড়াও গত ১৫ বছরে দেশের অভাবনীয় উন্নয়ন সাধন করে একটি উন্নয়নশীল দেশে পরিনত হয়েছে। তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত উন্নয়নের সুফল প্রাপ্তি নিশ্চিত করেছে। দীর্ঘ ৬ বছরের নির্বাসন শেষে ১৯৮১ সালের ১৭ মে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নব উদ্যোমে সংগঠিত হয়। জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বাঙালি জাতির হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার পুনরুদ্ধারের এক নবতর সংগ্রামের পথে যাত্রা শুরু করে আওয়ামী লীগ।
জেলা আওয়ামীলীগ নেতা ছরোয়ার আলম বলেন,জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরে শেখ হাসিনা গত ৪ দশকেরও বেশি সময় ধরে এই দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্ব এই দলের নেতাকর্মীদের প্রেরণার উৎস এবং তা সংগঠনকে করেছে সমৃদ্ধ। শেখ হাসিনার আপসহীন, সুদক্ষ ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে স্বৈরতন্ত্রের চৌহদ্দি পেরিয়ে গণতন্ত্রের স্বাদ পেয়েছিল বাংলার জনগণ। কালের বিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আজ ডিজিটাল বাংলাদেশের পথ পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বাপ্নিক অভিযাত্রী আওয়ামী লীগ।
কাকারা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শাহাব উদ্দীন বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পথপরিক্রমায় অনেক অশ্রু, ত্যাগ আর রক্তের বিনিময়ে বাঙালি জাতি ফিরে পায় ‘ভাত ও ভোটের অধিকার’; দীর্ঘ স্বৈরশাসনের অবসানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা। আজ বঙ্গবন্ধু কন্যা, রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে ও সুদক্ষ রাষ্ট্র পরিচালনায় সুশাসন, স্থিতিশীল অর্থনীতি, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, উন্নয়নে গতিশীলতা, ডিজিটাল বাংলাদেশ, শিক্ষার প্রসার, স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণ, কর্মসংস্থান, বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী, খাদ্য নিরাপত্তা, নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যুগান্তকারী উন্নয়নের ফলে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে একটি আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
লক্ষ্যারচর ইউনিয়ন আওয়ামিলীগের সভাপতি সেলিম উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উন্নীত হয়েছে।
আওয়ামী লীগের ইতিহাস, বাঙালি জাতির গৌরবোজ্জ্বল অর্জন ও সংগ্রামের ইতিহাস। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাসহ বাঙালি জাতির যা কিছু শ্রেষ্ঠ অর্জন, তার মূলে রয়েছে জনগণের এই প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব। জন্মলগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের শক্তির উৎস জনগণ, শক্তির উৎস সংগঠনের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
আওয়ামী লীগের শুভ জন্মদিন ঐতিহাসিক ২৩ জুন অঙ্কুরিত হয়েছিল ‘স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্নসূত্র’। জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। ৭৫ বছরে দেশ আজ উন্নয়ন, অগ্রগতি এবং সাফল্যের জয়গানে মুখরিত। অপ্রতিরোধ্য আওয়ামী লীগ কেবল অতীত বর্তমান নয়, বাংলাদেশের ভবিষ্যতের নির্মাতা। জাঁকজমকপূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করে আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের উপজেলা/থানা, পৌর/ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড শাখাসহ সকল স্তরের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা।